Sanowar Hossain


একখণ্ড কালো ফিতার গায়ে একটিমাত্র আলপিন

তখন প্রাথমিক বিদ্যালয় জীবন প্রতি ১৪ই আগস্ট এরসাদুল্লাহ সাদি (তেনু) স্যারের থেকে ঘোষণা আসতো আগামী কাল ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পাঠদান বিরত থাকবে, ঘোষণা মাফিক যথারীতি পরবর্তী দিবসে সক্কালে গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে উপস্থিত হতাম, সত্যি বলতে কি কালো ব্যাচের সাথে আলপিনের প্রতি আমার আলাদা একটা দুর্বলতা ছিল যদিও তখন বুঝতামনা সেই দিবসের মর্মকথা, গিয়ে দেখতাম অন্যদিন শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলন হতো আর সেদিন তার সাথে একটা কালো পতাকা যুক্ত হতোদিবস শেষে রাতে ঘুমোতে যাবার সময়ও আমার সাদা শার্টে ব্যাচটি গাঁথায় থাকতো ঘুমনোর আগেও ভালোভাবে দেখেনিতাম ব্যাচ থেকে পিনটা খুলেপড়েছে নাকি? যখন দেখেছি ব্যাচটা জথাস্থ আছে তখন ঘুমোতে গেছি। একবার সেই অবস্থাতেই শার্টটা গায়ে চাপিয়ে স্কুলে চলে গিয়েছিলাম দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একরামুল স্যার ব্যাচ দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন কালো পড়েছিলে কেন? উত্তর দিতে পারিনি স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ক্লাশে চলে গিয়েছিলাম কিন্তু যেদিন ১৫ই আগস্টের পেছনের ইতিহাস জেনেছিলাম সেদিন মনে হয়েছিলো এই ইতিহাস না জানলেই বুঝি ভালো হতো- কেনোনা যেই লোকটি সোনার বাংলাকে স্বপ্ন দেখানো শুরু করলো তাকেই কিনা জীবন দিতে হলো সেই স্বপ্নের সোনার বাংলারই একদল বিপথগামী সেনার হাতে !! এমনকি বাদ গেলোনা সেই ছোট্ট রাসেলও!! যে কণ্ঠ শুনতে পেলেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে পড়ে, স্তব্ধ করে দেয়া হলো সেই কণ্ঠস্বর এইতো বাঙালি জাতি আমরা। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা বেঁচে থাকবেন খাঁটি বাঙালির অন্তরে অন্তরে। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক দেশটি যতোদিন থাকবে ততোদিন বাঙালি হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর নাম চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয় হয়ে আছেন। আবার আসছে সেই শোকবহ ১৫ই আগস্ট বাঙ্গালীর কান্নার :'( উপযুক্ত দিন- কাঁদো বাঙালি কাঁদো, কান্নার ফলে যদি একটু শাপমোচন ঘটে 



 

বালি'র জবানিকা পর্বঃ বালি রবে নীরবে

বালি আরম্ভের প্রাক্কালেই বলিয়াছিলাম ইহা নেহাত খেলার বসে লিখিয়া ফেলা এক ক্ষুদ্রাকার গল্পকথা কিন্তু একটুখানি বিস্তৃতভাবে চিন্তার প্রতিফলন ঘটাইলে বুঝিতে সক্ষম হইবেন প্রকৃতপক্ষেই কি ইহা নেহাত এক গল্প? বালি রচনার ক্রান্তিলগ্নে আসিয়া বলিয়া ফেলিতে পারিতাম ইহা প্রকৃতপক্ষেই গল্প তাহাতে হইতবা কেও কেও সাময়িক আনন্দ লাভ করিতে পারিত কিন্তু তাহাতে মোর অতিকায় এক মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা হইবে ফলে পুনঃরায় উচ্চারণ করিলাম ইহা মোর জীবনেরই গল্প মোর জীবন হইতেই নেয়া অনবদ্য সত্য এক কাহিনী, অনেকেই প্রশ্ন করিয়া বসিয়াছেন পর্বসমূহ কি আপনার দ্বারাই রচনা করা? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করিয়াই তাহলে ক্ষ্যান্তলাভ করিব, আপনাদিগকে বলি রচনার ভাষা বঙ্কিমের চনাবলীর অবদান ঠিকই কিন্তু সমস্ত কাহিনী মোর ২০০৫ সালের প্রারম্ভ হইতে ২০০৮ সালের প্রারম্ভের মধ্যে ঘটিয়া যাওয়া গল্প বিশেষ বালি নামকরণটাও মোর একচ্ছত্র অবদান, এই বালি মোর জীবনের সহিত এতটাই ওতপ্রোতোভাবে জড়িত যে তাহা সমুদ্রতীরবর্তী বালির সহিত সমতুল্য  সমুদ্রতীরবর্তী বালির সহিত সমতুল্য এই কারণেই বলিলাম যে সমুদ্রতীর হইতে মেশিনদ্বারা সমস্ত বালি অপসারণ করিয়া ফেলিলেও যে অবশেষটুকুন অবশিষ্ট রহিয়া যাইবে তাহা বালির আস্তরণ, মোর দেহ হইতেও সমস্ত অংশবিশেষ অপসারণ করিয়া ফেলিলে যেটুকুন অবশিষ্ট থাকিবে তাহাও ওই বালি, সমুদ্রে গমন করিতে অক্ষম? উষ্ণ মরুভূমিতে গমন করিয়া থাকেন? সেথা গেলেও একই চিত্রের  প্রতিফলন ঘটিবে, সত্যি   
মানব জীবন অনেকটাই গদ্য, পদ্য এবং উপন্যাসের সমন্বয়ে গঠিত, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অধিকতর গল্প লইয়া জীবন গদ্যের ন্যায় আরম্ভ হইয়া থাকে মধ্যবর্তী সময়ে আসিয়া কখনওবা ছন্দপতন ঘটিয়া থাকে, সমাপ্তিলগ্নে আসিয়া গদ্য, পদ্য সমস্তকিছুই মিলিত হইয়া উপন্যাসের ন্যায় একখান রুপ ধারণ করিয়া থাকে যাহার চূড়ান্ত উদাহরণ হইল  মোর বালি স্মৃতিসমূহ কখনও একত্রে গুছাইয়া রচনা করিয়া ফেলা সম্ভবপর নহে কেননা সমস্ত স্মৃতি একত্রে মনমদ্ধে আসিয়া ভীড় জমাইবেনা জীবনে কখনও পূর্বের বসন্তও ফিরিয়া আসিবেনা বাসনা থাকিলেও বিভাষিকার কারণে প্রাণাধিক প্রিয় মানবীর নিকটেও পৌঁছনো সম্ভবপর নহে কেননা সে তো বেশ সাচ্ছন্দেই রহিয়াছে তাহাতে মোর অনুপ্রবেশ বড়ই বেমানান যাহার ফলে আপনারে গুটাইয়া লইয়াছি জীবনে কাওকে না কাওকে পাইয়া যাইব ঠিকই কিন্তু ইহাই মোদ্দা কথা নহে আপনি যাহাকে পাইয়াছেন তাহাকে জীবনের ক্রান্তিলগ্ন অব্দি পাওয়াটাই মোদ্দা কথা
প্রকৃতপক্ষে বর্তমানকালের সম্পর্কসমূহই সৃষ্টি হইতেছে মিথ্যার উপরে ভিত্তি করিয়া আর মিথ্যার দ্বারা তৈরিকৃত সম্পর্কসমূহ মিথ্যার দ্বারাই করুণ পরিসমাপ্তি বরণ লাভ করিয়া থাকে বর্তমান কালের যুগলদের অভ্যন্তরে এমন কেহ আছে বলিয়া মোর বিশ্বাস হইবেনা যাহাদের জীবনে বালির ন্যায় সুখস্মৃতি বিদ্যমান ইহা এই কারণেই বলিলাম যে এই চার বছরের ক্ষুদ্র জীবনে বালির সহিত মোর এতোটুকুও দ্বন্দ্ব হয়নাই

বালির বিবাহ হইয়া যাইবার পরবর্তীতে চার তৃতীয়াংশ স্মৃতি লইয়া তাহা অগ্নিতে নিক্ষেপ করত চিরতরে নিশ্চিহ্ন করিতে গিয়াছিলাম অবশেষে একখানা লেমেলেটিং সম্বলিত তাসবির ভস্মীভূত করিতে গিয়া ভস্মীভূত হইবার কালে আপনার অজান্তে হস্তে আসিয়া লাগিয়া গেল ফলাফল যাহা ঘটিল হস্তে তাৎক্ষণিক ফোস্কা লইয়া লইল গিয়েছিলাম স্মৃতিচিহ্ন নিঃশেষ করিতে কিন্তু স্মৃতি কি নিঃশেষ হইবার জিনিস? আরও অধিক হারে জাঁকিয়া বসিয়াছে যাহা অদ্যবধি মোর শরীরে বিদ্যমান আজ বহুকাল হইয়া গিয়াছে, বালি ছাড়িয়া গিয়াছে আপনারে নব্যরূপে সাজাইতে ইচ্ছের তরী লইয়া অচেনা সমুদ্রে প্রতিনিয়ত পাড়ি জমাইতেছি কেনই বা আপনারে বাস্তবিক চিন্তাধারা হইতে বিস্তর দূরত্বে রাখিয়াছি তাহা সম্পূর্ণটা মোর অজানা তবে মাঝেমাঝে মনে হয় হইত তাহাকে অধিক ভালোবাসি বলিয়াই, মনমধ্যে জমাইয়া রাখা আবেগগুলাকে বহুকাল পূর্বেই শ্বাসরোধ করিয়া হত্যা করিয়াছি তবুও তাহারা বারংবার পুনর্জীবিত হইয়া পড়ে আর ভেতর হইতে বালি টাইপের লেখা হুমড়ি খাইয়া অনাবৃত হইয়া পড়েজমিয়া থাকা অনুভূতি সমূহ সর্বদাই অদ্ভুত, তাহার চাইতে অধিক অদ্ভুত হইতেছে জমিয়া থাকা শেষ স্পন্দন যাহা বালির জবানিকার দ্বারা ঘটাইলাম প্রকৃতপক্ষে ইহা সমাপ্ত হইবার নহে কিছু দিবসের তরে থমকাইয়া যাইবে হইত, পুনরায় মণমধ্যে জাগিয়া উঠিবে নব নাম ধরিয়া দেহে যতদিন অব্দি প্রাণ রহিবে বালি রহিবে নীরবে..................পরিসমাপ্তি ঘটিল 


বালি ১১তম পর্বঃ বালির বিয়ে

গত নিশিতে বালির গায়ে হলুদ সম্পন্ন হইয়াছে, বালি হস্তরাঙাতে গিয়া তাহা বারংবার তুলিয়া ফেলিয়াছে কান্না করিয়া শয়ন করিয়াছে দ্রুতই ইহা কর্ণে আসিয়া পৌছলো নব্যগন্তব্ব্যে গমন করিবার প্রতীক্ষায় যে অপেক্ষমান তাহার সম্পর্কে এই সমস্তকিছু শ্রবণ করিয়া এহেন পরিস্থিতে মোর কি উচিৎ আর কি অনুচিত তাহা মোর দ্বারা পরিষ্কার করিয়া ওঠা সম্ভবপর হইলনাকেবলমাত্র সমালোচনার হস্ত হইতে রক্ষাপাইতে আর বন্ধুদের গুলির ন্যয় বাক্যের হস্ত হইতে আপনারে সুরক্ষিত রাখিতে আপনা হইতে পলায়ন করিবার রাস্তা খুঁজিতে লাগিলামভাগ্য সুপ্রসন্ন রহিয়াছিল বালির বিবাহের দিবসেই মোর আপন মামানীর কনিষ্ঠভ্রাতার বিয়ের অনুষ্ঠানের দাওয়াত রহিয়াছিল এবং তাহাদের তরফ হইতে মোরে সঙ্গে লইয়া যাইবার এক চক্রান্তও চলিতেছিল আসলেই তাহা মোর আশীর্বাদ হইয়া উঠিলবালির বিবাহের দিবসে অতি প্রভাতে বড় মামানিরে সঙ্গে লইয়া সেজো মামার শ্বশুরালয় টগরইলে গিয়া উপস্থিত হইলামবিয়ে বাড়ীতে কুটুম্বগণের সহিত আপনারে মিলাইয়া ফেলিতে চাহিলাম এবং কখনও অল্প কখনওবা ভারী কর্মের দ্বারা আপনারে ব্যাতীব্যস্তই রাখিলাম যাহার ফলে সমস্ত দিবসে মনমদ্ধে কয়েকবার মাত্র বালি আসিয়া হানা প্রদান করিবার সুযোগ পাইল কুটুম্বগণ বিয়ে বাড়ী হইতে বিদায় লইলে নিজেও আপন গৃহে ফেরত আসিবার জন্যে উদগ্রীব হইয়া উঠিলাম কিন্তু বাধসাধল মোর নানীঅধিক দিবসান্তে তাহাদের গৃহে গমন করিবার কারনে মোরে কয়েক দিবস থাকিয়া যাইতে আচ্ছা করিয়া ধরিয়া বসিলআপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাইয়া কয়েকদিবস থাকিয়া যাইতে মনস্থির করিয়া ফেলিলামথাকিয়া যাইব শ্রবণ করিয়া মোর কনিষ্ঠ মামা, খালারা প্রচণ্ড খুশিই হইলো সকলে মিলিয়া খোশগল্প আর সিনেমা দেখাতে মগ্নহইলামভয় যে রাত্রিকে দেখিয়া তাহা সম্মুখে আসিয়া পরিল নৈশভোজ সারিয়া কে কোথায় ঘুমাইবে তাহা বরাদ্দ হইতে লাগিলদুর্ভাগ্যক্রমে মোর শয়নের স্থান হইল সদ্য বিবাহ করা মামার বাসর ঘরেঅনেকটায় কাঁকতলিয় হইয়া গেল ব্যাপারখানা কেননা সেই নিশিই যে বালির বাসর নিশিকিছু নিশি অতিক্রান্ত হইতেই মোর দম বন্ধ হইয়া আসার উপক্রম হইলে অধিক মশার দোহাই প্রদান করিয়া অন্য কক্ষে গিয়ে শয়নের মনস্থির করিলে নানী আসিয়া কয়েল জ্বালাইয়া দিয়া চলিয়া গেলো প্রকৃত কষ্টটা কেও ধরিতেই পারিলনাসেই নিশিতে মোর নিদ্রা হনন হইলো সমস্ত নিশি এপাশ ওপাশ করিয়া কাটাইয়া দিলামফজরের ওয়াক্তে ঘুম চাপিয়া আসিল স্বপ্নে বালির দর্শন পাইলাম সমস্তকিছু মিলিয়া গেলো শুধু জীবনের তফাৎটুকুই কেবল রহিয়াগেল বিস্তর সেই জীবনের দূরত্ব কেননা আজই যে বালির বিয়ে 

স্মৃতি নামক জিনিসটা প্রায় স্ক্রিপ্টের ন্যায়, হযবরল করিয়া কোথাও না কোথাও রচিত থাকিবে ঠিকই কিন্তু উহাতে অর্থ ব্যাতীত অধিক পরিমাণ বর্ণও জমাইয়া থাকিয়া যাইবে ইহা হইলো মোর আবেগের উক্তি তবে ভালোবাসা লইয়া রচিত হযবরল বাক্যগুলা যদি আমেরিকার ম্যাথমেটিশিয়ান আলার্ন টুরিং এর টুরিং মেশিনের এক প্রান্তে প্রবেশ করানো সম্ভবপর হইত তাহা হইলে হযবরলর অর্থসমূহ অধিক সুদর্শন হইয়া উন্মুক্ত হইয়া পড়িত ইহা মোর অধিক বিশ্বাসগত হইয়া পরা ব্যক্তিটিকে উদ্দেশ্য করিয়া রচিত পত্রগুলো আপনার অজান্তে একা একা বারংবার পঠিত হইতে থাকে হইতবা অশ্রওঝরিয়া পড়ে অজান্তেই, অক্ষির ধবল জল অশ্রুর সহিত মিশিয়া কৃষ্ণকার হইয়া টপাটপ ধ্বনি তুলিয়া মৃত্তিকাতে নিমজ্জিত হইয়া পড়ে..................      

বালি ১০ম পর্বঃ আগামীকল্য বালির গায়ে হলুদ

ফলাফল বিপর্যয় ঘটিবার কারনে নিজের সমস্ত ইচ্ছে দমিত রাখিয়া গ্রামের কলেজেই এন্ট্রাস পড়িতে থাকিয়া গেলাম, প্রকৃতপক্ষে বলিতে গেলে উচ্চমাধ্যমিক পড়িবার কোন আকাঙ্ক্ষায় মোর রহিয়াছিলনা একান্ত বাধ্য হইয়াই পুনঃরায় আরম্ভ করিতে হইলমহাবিদ্যালয়ে গমন করিতাম ঠিকই কিন্তু তাহা বিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্যে বলিলে ভুল বলাই হইবেঅধিক সময় বন্ধু-বান্ধবের সহিত লাইব্রেরীতে অযথায় বসিয়া আড্ডাতে মগ্ন থাকিতাম অবশ্যই ইহার পশ্চাতেও একটা কারণ রহিয়াছেকারণটা এইরূপ যে আমি মহাবিদ্যালয়ে পদার্পণ করিলেও বালি কিন্তু তখন অব্দি মাধ্যমিকের গণ্ডিতেই আবদ্ধ রহিয়াছিল কিন্তু বিদ্যালয় আর মহাবিদ্যালয়ের ভবন সামান্য দূরত্বে অবস্থান করিবার দরুন পাঠশালার ক্লাশ ভগ্ন হইলেই পানি পানের ছুতো দ্বারা মহাবিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে গ্লাস লইতে আসিয়া উপস্থিত হইতমজার বিষয় হইল বালিরে লাইব্রেরীতে প্রবেশ করিতে দেখিলেই মোর সমস্ত বন্ধু-বান্ধব রুম হইতে প্রস্থান লাভ করিত যাহার ফলে অধিক সময় ধরিয়া খোশআমোদ করিবার বিস্তর সময় পাইয়া যাইতাম যাহার ফলে বেশ আনন্দেই কাটিতেছিল মহাবিদ্যালয়ের দিনগুলোমার্চ/০৮ হঠাৎ একটা সংবাদ পাইয়া  একদিবসে বালি পত্রমারফত ডাকিয়া পাঠাইল এবং উপযুক্ত স্থানে গিয়া বালির সহিত সাক্ষাৎ করিলাম লক্ষ্য করিয়া দেখিলাম বালির সমস্ত মুখমণ্ডল জুড়িয়া চিন্তার কৃষ্ণাকার এক রেখা চলাচল করিতেছে দেখিবা মাত্র ভীত হইলাম মোর ধারণাও সত্য হইল বালি যাহা বলিল তাহাতে মস্তকের উপরে আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল কথা গুলা এইরূপ যে বালির বিবাহ স্থির হইয়া গিয়াছে ২৩ মার্চ ০৮, পাত্র সামরীক বাহিনীতে কর্মরতদ্রুত সমাপ্ত করিবার উদ্দেশ্যে কিছু কথা অব্যক্তই রাখিয়া দিলাম দেখিতে দেখিতে বালির গায়ে হলুদের ক্ষণ সম্মুখে আসিতেছে বালির গায়ে হলুদের পূর্বের দিবসে মোর গৃহের পাশে তাহার আত্মীয়ার গৃহে গ্রাম্য রীতিতে থুবরা খাইতে উপস্থিত হইলো এমতাবস্থায় জানালার ধারে গলির দিকে সম্মুখফিরিয়া বসিয়া রহিয়াছিলাম বালিরে দেখিলাম মোর জানালার দিকে সম্মুখ ফিরিয়া দাঁড়াইয়া পড়িল দৃষ্টি কতটা তুখোড় হইলে এতোদূর অব্দি নজর আসিয়া পরে তাহা মোর অজানা, মাতাকে ঝাড়ু হস্তে লইয়া গলি পরিষ্কার দেখিলাম বালি মাতারও নেত্রগোচর হইল এবং মাতা মোরে ডাক দিয়ে বলিলো হলুদ শাড়ী পরিধান করা একটা সুন্দরী রমণী দেখিয়া যাইতে যাহা শ্রবণ করিয়া রাগে মোর গা জ্বলিয়া যাইতে লাগিল মনে মনে বলিলাম মাতা মোর জীবনের আগামীকল্য বালির গায়ে হলুদ

বালি ৯ম পর্বঃ ফলাফল বিপর্যয়

২০০৭ সাল, পথিমধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা দরজায় আসিয়া উপস্থিত হইল। মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যার চাপে বালিরে কয়েক দিবস হইতে ভুলিয়া থাকিবার চেষ্টাই করিলাম, দেখা করাতো বন্ধ করিলাম করিলাম পত্র লিখার ও অবকাশ পাইয়া উঠিলামনা। এহেন অবস্থাতে বালি কি ভাবিতেছিল তাহা মোর অজানায় রহিয়া গেলো শুধু একদিবসে মোরে এক আত্মিয়ের আলয়ে গমন করিতে দেখিয়া অশ্রুসিক্ত আঁখি লইয়া বালি মোর সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইলো, এমতাবস্থায় মোর সম্মুখে বালিরে দেখিয়া অপ্রস্তুত হইয়া জিজ্ঞেস করিয়া বসিলাম কেমন আছো? প্রশ্নটা শুনিয়া বুঝি বালির বুক ফাটিয়া চৌচির হইয়া পড়িল অশ্রু আর ধরিয়া রাখিতে পারিলোনা সে। মনমদ্ধ্যে সান্ত্বনার বাণী হাতড়াইয়া ফিরিতে লাগিলাম, নিমিষেই কেমন একটা থমথমেভাব বিরাজ করিয়া উঠিল। থমথমে ভাব হইতে মুক্তি দিতে নিজেই বলিয়া উঠিলাম ভয় নেই বালি, পরীক্ষার চাপে অতিষ্ঠ হইয়া রহিয়াছি শেষ হলেই স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়া আসিব। উক্তিটি শুনিয়া বুঝি বালির বুক হইতে হাজারমণ ওজনের ভার নামিয়া গেল ওষ্ঠকোণে কিঞ্চিৎ হাঁসি ফুটিয়া উঠিতে দেখিয়া নিজেও একটুখানি নিশ্চিন্ত হইলাম। অধিকচাপ তাহার সহিত কিঞ্চিৎ ব্যামো মাথায় লইয়া মাধ্যমিক পরীক্ষা সমাপ্ত করিলাম। পরীক্ষার সমাপ্তি আর ফলাফলের মধ্যবর্তী ঘটনা সংক্ষেপিত করা হইলো। ১২ জুন ২০০৭ ফলাফল প্রকাশের তারিখ আসিয়া উপস্থিত হইলো যদিও জনসম্মুখে প্রকাশ করিতে লজ্জায় মাথা কাটিয়া যাইতেছে তবুও বলিয়া ফেলিলাম- মাধ্যমিক ফলাফলে আমি একজন এ প্লাস প্রত্যাশী ছাত্র হিসেবেই বিবেচিত রহিয়াছিলাম কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পরবর্তীতে যাহা জানিতে পারিলাম তাহা আমি কেন মোর পিতা-মাতা সহ শিক্ষককুল ও বিসৃত হইয়াছিল প্রকৃতপক্ষে বলতে গেলে এই ফলাফল কাহারও কাম্য ছিলনা। ইহার পশ্চাতের কারণ হিসেবে পরিবারের অনেকে বালিরেই দোষারোপ করিল ইত্যাদি ইত্যাদি। সকলেই যখন মাধ্যমিকের ফলাফল লইয়া উৎফুল্ল আমি তখন গৃহাভ্যান্তরে আবদ্ধ, লজ্জাতে মুখ দেখানো দায় হইয়া পড়িল যাহারা ভালো ফলাফল করিল তাহারা মোরে সমবেদনা জানাইতে গৃহে আসিয়া উপস্থিত হইলো।তবে মোদ্দা কথা যাহা ছিল তাহা হইলো খারাপ ফলাফল, ইহারে মোর জীবনের বিপর্যয়ই বলবো "ফলাফল বিপর্যয়"

বালি, ৮ম পর্বঃ চুরি হইয়া গেলো কিছু স্মৃতি

পূর্বের পর্বে মোর পিতার দ্বারা চপেটাঘাত প্রাপ্ত হইয়াছিলামচপেটাঘাত প্রাপ্ত হইয়া পাগলামোর মাত্রাটা কমিয়া আসিয়াছিলএমতাবস্থাতে ব্যাচভিত্তিক উদ্যোগ লওয়া হইলো সকলে মিলিয়া স্বপ্নপুরি গমন করিব পরিশেষে ভ্রমণের দিবস আসিয়া উপস্থিত হইলদ্রুত সমাপ্তি টানিবার লক্ষ্যে অভ্যন্তরে কিছু কাহিনীর সংক্ষেপণ ঘটাইলামস্বপ্নপুরি ভ্রমণের সঠিক দিনখানা স্মরণে আসিতেছেনা তবে সেই দিবসে বালির সহিত অনেকক্ষণ যাবত কথা হইয়াছিল অধিক দিবসান্তেস্বপ্নপুরি হইতে ফেরত আসিয়াছিলাম, ফিরিবার কালে বালিকে প্রদানের লক্ষ্যে কিছু উপহার লইয়া আসিয়াছিলামপরবর্তী দিবসে স্বপ্নপুরি হইতে বহন করিয়া নিয়ে আসা উপহার সামগ্রী ক্লাস সমাপ্তি হইবা মাত্র বালিরে প্রদান করিব ভাবিয়া পাঠশালায় উপহার সঙ্গে লইয়া গমন করিলাম এবং সযত্নে আড়াল করিয়া রাখিলাম বলা বাহুল্য যে প্রতিটি ক্লাশ ভাঙ্গিবা মাত্রই ভালোভাবে পরখ করিয়া লইতাম ঠিকঠাক রহিয়াছে কি নাক্লাশ সমাপ্ত হইলে মস্তকের উপরে আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল, দেখিলাম উপহার সামগ্রী কাওরোর দ্বারা গোপন করা হইয়াছে এবং তাহা চিরতরে লুকায়িত হইলো, কে এই কাজ ঘটাইয়াছে তাহা টের পাইলেও শারীরিকভাবে অসমর্থ থাকিবার কারনে কিছুই করিতে পারিনাই শুধুই দুই চক্ষে দেখিয়া থাকিয়া গেলামবালি ঘটনা শুনিয়া বরং সান্ত্বনাই প্রদান করিল তবুও মনখুন্ন হইয়া রহিল ইহা ভাবিয়া যে চুরি হইয়া গেলো কিছু স্মৃতি, স্মৃতি খোয়া গেলো বটে তবে ইহাতে ভালোবাসা বিন্দুমাত্র হ্রাস পাইলনা

বালি, ৭ম পর্বঃ প্রবল চপেটাঘাত

পূর্বেই বলিয়াছিলাম মোর পিতা বিপণীর কর্ম সমাপ্ত করিয়া অধিক নিশিতে গৃহে আসিয়া উপস্থিত হইতপূর্বের ন্যয় সেই নিশিতেও অনেক্ষন বাদে গৃহে আসিয়া উপস্থিত হইল পার্থক্য কেবল মুখমণ্ডলে পরিলক্ষিত হইল বুঝিতে বাকী রহিলনা বালির পিতা মোর পিতার নিকটে নালিশ করিয়াছেপরিষ্কার স্মরণে আসে সময়টা আছিল রমজান মাস, সেহেরী ভক্ষন করিতে উঠিয়া পিতা মোরে জিজ্ঞেস করিয়া বসিল আমি বালিরে চিনি কি না (বালির পিতার নাম উল্লেখ পূর্বক)? ইহাও সত্য যে তখন অব্দি মোর বালির পিতার নাম অজানাই রহিয়াছিলপিতা পুত্রের কথপোকথন শুনিয়া মাতার বুঝিতে আর বাকী রহিলনা কি ঘটিয়াছে ইহার ফলে নারীসুলভ আচরণ করিয়া সারা বাড়ী মাথায় তুলিয়া ফেলিল;  আমিও "চোরের মায়ের বড় গলা" বাক্যটি যে অধিক সত্য তাহার পুনরাবৃত্তি ঘটাইলামএতক্ষণ পিতাজি মোর সহিত স্বাভাবিক ভাবেই বাক্য বিনিময় করিতেছিল তাহার সহিত অধিক উপদেশ দান কিন্তু মাতার সহিত মোর উচ্চস্বরে বাক্য বিনিময় করিতে দেখিয়া আপন বসিবার স্থান হইতে উঠিয়া মোর কপোলে সশব্দে একখান চপেটাঘাত করিয়া বসিলেনচপেটাঘাত খানা এতটাই প্রবল রহিয়াছিল যে পরবর্তীতে মোর পিতৃজন্মে আর একখান ও কপালে জোটেনাইচপেটাঘাত প্রদত্ত হইয়া মনঃক্ষুণ্ণ করিয়া লেপ মুড়ি দিয়া ঘুমাইয়া পরিলামঘুমানোর পূর্বে মোর মাতা তাহার মস্তকে হস্ত রাখিয়া কসম কাটিয়া লইল যাহাতে বালিরে ভুলিয়া যায়পরবর্তী দিবসে ঘুম হইতে উঠিয়া নিশিতে ঘটিয়া যাওয়া ঘটনা স্মরণে আসিবা মাত্র মনোমধ্যে চিনচিন আওয়াজ অনুভূত হইলবালিরে লইয়া ঘুরিতে যাওয়ার পূর্বপরিকল্পনা বিনষ্ট হইলপ্রয়জোনের সাপেক্ষে কয়েক দিবসের তরে পিরিতির আধিক্য বর্জন করিয়া সাধারণের ন্যয় অসাধারণ বেশ ধরিলাম 

বালি, ৬ষ্ঠ পর্বঃ হারানোর ভয়



বালির সহিত সম্পর্ক তখনও অপরিপক্ক মৃত্তিকার ন্যায় কর্দমাক্ত, অধিক কোন কিছুর ফলাফল যে সুমিষ্ট হয়না তাহার প্রমাণ মিলিল কিছু পথ অতিক্রান্ত হইতে না হইতেই- হঠাৎ একদিন ব্যামো বাধিয়া বসিল প্রায় তিন দিবস  বিছানায় অবস্থান লইতে হইল যাহার ফলে পাঠশালায় অনুপস্থিত রহিলামযে বালি দিবসে দুই-তিনখানা পত্র প্রেরণ করিত, অ্যাসেম্বলিতে স্থির নয়নে চাহিয়া রহিত, নদীর বুকে অর্ধগলা পানিতে নামিয়া খুজিয়া বেড়াইত আমি কোন কিনারে অবস্থান করিতেছি, ঘাট হইতে ফিরিবার পথে যে বালি কলস নামাইয়া মোর পাহাড়ে আড়াল হউয়া অব্দি অপেক্ষা করিত, পিতামহর বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইলে  মাঠের কোন প্রান্তে অবস্থান করিতেছি তাহা খেয়াল করিতে করিতে গৃহাভ্যান্তরে প্রবেশ করিত সেই বালি কিরুপে তিন দিবস না দেখিয়া না পত্র প্রদান করিয়া থাকিতে পারিবে? বালি আপনারে সংযত রাখিতে না পারিয়া মোর গৃহের পাশে অবস্থানরত তাহার এক আত্মীয়র হস্ত মারফত এখান পত্র প্রদান করিল দুর্ভাগ্যক্রমে পুস্তকের মলাট ভেদ করিয়া পত্রখানা উন্মুক্ত হইয়া পরিল এবং কয়েক হস্ত ঘুরিয়া বালির পিতার হস্তে গিয়া পরিলসেই দিবস অপরাহ্নে পুনঃরায় বালির পত্র আসিয়া উপস্থিত হইল পত্রখানার মুলভাব ছিল এইরূপ যে- পুরবাহ্নের পত্রখানা পিতাজি কিরুপে যেন পাইয়া গিয়াছে মোর তরফ হইতে যেন পত্রখানা অস্বীকার করা হয়, তবে এইটা জানিয়া খুশি হইলাম যে পত্রে মোর নাম উল্লেখ ছিলনা আর যাহা লিখা হইয়াছিল তাহা ছিল এক বিশালাকার কবিতা, ব্যাপারখানা এড়িয়ে যাবার বিস্তর সময় মিলিল তবুও হারানোর ভয় পাইয়া বসিল যখন শুনিলাম বালির পিতা মোর পিতার কর্ণে ব্যাপার তুলিয়া ধরিয়াছেকিরুপে ব্যাপারখানা পাশকাটাইয়া যাওয়া যায় তাহার চিন্তায় মশগুল হইয়া পরিলাম

বালি, ৫ম পর্বঃ পত্রবিলাস



শুরু হইল পত্র আদান-প্রদান পর্ব, বালির' হস্ত লিখন পাঠ ছিল দুরূহ, পত্রের ভাবার্থ বুঝিবার জন্য একাধিকবার পাঠ ছিল বাধ্যতামূলকছাত্রী হিসেবে বালি যেমনটা ছিল পত্র দেখিলে তাহা খুব সহজেই  অনুধাবন করা যাইত তবুও তাহার পত্র রচনায় এতোটুকু ক্লান্তি ছিলনা এক পত্র হইতে অপর পত্রের দূরত্ব সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা হইত তবে এমনও দিবস গিয়াছে ২-৩ বারও পত্র আসিয়া জুটিতএহেন অবস্থা বিরাজ করিতে লাগিল যে পত্র রাখিবার স্থান আর সঙ্কুলিত হইতেছেনা দেখিয়া কামরার এক কোণের মৃত্তিকা খনন করিয়া অধিক যত্নে পত্রের কিছু অংশ লুকাইয়া রাখিয়া দিয়াছিলামপথে যে সমস্ত পত্র আসিয়া হাজির হইত তাহার অধিকাংশ পথমদ্ধেই পড়িয়া সমাপ্ত করিতামএমনই এক দিবসের স্মৃতিচারণ করিলাম- পূর্বের দিবসের ন্যয় একখান পত্র পাইবা মাত্র বাঁশঝাড়ের অভ্যন্তর দিয়া পড়িতে পড়িতে অতিক্রম করিতেছিলাম পথমদ্ধে পরিচিত একব্যক্তিকে দেখিবা মাত্র পত্রখানা গুটাইয়া মুখোমদ্ধে প্রেরণ করাইয়া চর্বণ করিবা মাত্র গলাধঃকরণ করিয়াছিলাম ফলে ব্যক্তিটার সহিত বাক্য বিনিময় না করিয়া মুখভর্তি হাঁসি দিয়া সরিয়া পরিলাম, পরবর্তীতে প্রশ্নের সম্মুখীনও হইতে হইয়াছিল মুখমদ্ধে কি গোপন করিয়াছিলাম? সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হইয়াছিলাম,পাঠক মনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিতে পারে পরিচিত ব্যক্তিটি কে রহিয়াছিল? পরিচিত ব্যক্তিটি রহিয়াছিল মোর মাতার আপন ভ্রাতা যাহার ফলে গৃহে কানাঘুষা লাগিয়া গেলো কি গলাধঃকরণ করিয়াছিলামআমি কিরূপে তাহাদিগকে বোঝায়তাম যে যাহা গলাধঃকরণ করিয়াছিলাম তাহা ছিল বালির পত্র আর যে বিলাসিতায় ভাসিতেছিলাম তাহা ছিল পত্রবিলাস



বালি, ৪র্থ পর্বঃ অপেক্ষার পরিসমাপ্তি



বালিরে লইয়া অধিক চিন্তার ফল কোনোদিনও সুখকর ছিলনা তাহার প্রমাণ মিলিয়াছিল ১ম সাময়িক পরীক্ষায় গণিতে ফেল করার দরুনযদিও এই মুহূর্তে মোর পড়ার বিষয়খানা গণিত এবং যাহা অন্তিম মুহূর্তে অবস্থানরত তবুও সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলিবার নহেপথিমধ্যে ২য় সাময়িক পরীক্ষা সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল, ১ম সাময়িক পরীক্ষার সিট বসাইবার অভিপ্রায়ে সেইদিন ১২ টার দিকে পাঠশালা ছুটির ঘণ্টা বাজিয়া গেলছুটির ঘণ্টা পাইয়া নিম্ন মস্তকে গৃহের পানে পা বাড়াইলাম, কিছু পথ অতিক্রান্ত হইতেই পশ্চাৎ হইতে জনৈক বালকের মুখে নাম ধরিয়া ডাকার আওয়াজ পাইলামপশ্চাৎ ফিরিয়া বালকটির হস্তে একখানা কাগজ দিখিবামাত্র মোর চক্ষুজোড়া আনন্দে চকচক করিয়া উঠিল হ্যাঁ ইহাই ছিল মোর কাঙ্খিত পত্রখানাপত্রখানা পাইবা মাত্র হৃদয় মাঝারে যে ঢেও খেলিয়া গেল তাহা সমুদ্রের উত্তাল ঢেও কেও হারমানানোর সমতুল্যপত্র পাঠ করিতে মোর তর আর সহিতেছিলনা মনে হইতে লাগিল জনসম্মুখেই উম্মুক্ত করিয়া পাঠ আরম্ভ করিয়া দেইঅধিক কষ্টে আপনারে সংযত করিবাপূর্বক গৃহে প্রবেশ করিবা মাত্র দ্বার রুদ্ধ করিলামরুদ্ধ কামরাতে আবদ্ধ হইয়া অন্ধকারে পত্র খানা লইয়া বক্ষে, পেটে, অংসে ঠোঁটে বারংবার চুম্বনে চুম্বনে ভরাইয়া তুলিলাম, পত্রখানা যে কতবার পাঠ করিয়াছিলাম তাহা গণনযোগ্য নহে, পাঠ করা সমাপ্ত করিয়া বালিসের নিচে রাখিলাম পুনরায় বাহির করিয়া পাঠ আরম্ভ করিলাম অনেক্ষন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিতে থাকিলসেই দিবসে মোর সমস্ত মুখমণ্ডলে আনন্দ যেন আর ধরিলনা পত্রখানা কোথাই রাখিব তাহার উপযুক্ত স্থান মিলিলনা অবশেষে মোর মানিবাগেই স্বযতনে স্থান মিলিলঅপেক্ষার প্রহরের পরিসমাপ্তি ঘটিল ধন্যও হইলাম বটে
           

বালি, ৩য় পর্বঃ প্রত্তুওরের অপেক্ষায়

বালিরে কি রূপে ব্যাপারখানা জানানো যায় তাহা লইয়া ভাবনার নতুন একটা মাত্রা আরম্ভ হইলবলিয়া রাখা ভালো তৎকালীন সময়ে মোর পিতাজির আলিনগর বাজারে একখান খাদ্য দ্রব্যাদির বিপণি রহিয়াছিলো, বিপণিখানা এতটাই প্রচলিত রহিয়াছিলো যে নিশিতে তাহা বন্ধ করিয়া গৃহে ফেরত আসিতে কোন কোন নিশি সমাপ্তির পানে গড়াইয়া পরিতসারাদিনে সংসারের ঘানি টানিয়া ক্লান্তির ছাপ মুখমণ্ডলে আঁকিয়া মাতাও দ্রুত ঘুমাইয়া পরিত, বাকী রহিল মোর কনিষ্ঠ ভ্রাতা যে কিনা সবে মাত্র দুই ক্লাশে পদার্পণ করিয়াছিল, তাহার আর কত নিশি জাগিবার অভ্যাস থাকিবে তাহা ব্যাখ্যা না করিলেও চলিবেইহার ফলে গভীর নিশিতে বালিরে লইয়া ভাবনার সাগরে নিমজ্জিত হইবার বিস্তর সময় মোর কপালে জুটিয়া যাইত, অতঃপর গভীর নিশিতে ফাঁক বুঝিয়া পত্র রচনায় মগ্ন হইতামপত্র রচনা করিতে গিয়া কি পরিমান কাগজ যে উৎচ্ছৃষ্ট করিয়াছি তাহা গাহিয়া, শুধাইয়া উপযুক্ত প্রকাশ ঘটানো মোর নগণ্য মেধাতে বেমানান শুধু এতোটুকুই বলিতে পারি মাঝে মধ্যে উৎচ্ছৃষ্ট কাগজ ফেলিতে গিয়া ঝামেলাও কম পোহাইতে হইনাইঅধিক ভাবনা চিন্তার সংমিশ্রণ ঘটাইয়া যে একখানা পত্র দাঁড় করাইলাম তাহা বাধ সাধিল উপযুক্ত মাধ্যমের অভাবে, কি করিয়া পত্রখানা বালির নিকটে পৌঁছানো যাই সেই ভাবনায় অস্থির হইয়া পরিলামবক্ষ পকেটে পত্রখানা লইয়া কয়েক দিবস যাবৎ ঘুরঘুর করিয়া ঘুরিয়া বেড়াইলাম ঠিকই কিন্তু উপযুক্ত কাজের কাজ কিছুই করিতে পারিলাম নাভাবনায় পরিয়া গেলাম তবে কি মোর চেষ্টা বৃথা হইয়া যাইবে!!! অবশেষে অধিক চেষ্টার ফলে মোর এক আত্মীয়কে পত্রখানা পৌঁছানোর জন্য রাজি করাইতে সক্ষম হইলাম এবং তাহার মারফত পত্রখানা প্রদান করিতেও সক্ষম হইলামপরবর্তী দিবসে সংবাদ আসিল বালি মোর পত্র গ্রহণ করিয়াছে, সংবাদখান শুনিয়া কিরুপ আনন্দিত হইয়াছিলাম তাহা বলিয়া বুঝাইতে পারিবনা তবে হ্যাঁ বক্ষে মোর সাহসের সঞ্চার ঘটিল, পুলকিত হৃদয় লইয়া সদানন্দে প্রত্তুওরের অপেক্ষায় বসিয়া রহিলাম

বালি, ২য় পর্বঃ আলগা হাওয়া

অঙ্কুরোদগম কেমন করিয়া বিস্তার লাভ করিতে লাগিল তাহা লেখকগণের ন্যায় বিস্তররূপে তুলিয়া ধরিতে না পারিলেও ক্ষুদ্রাকারভাবে তুলিয়া ধরিতে পারিবো এই বিশ্বাসখানা মোর রহিয়াছে, ইতোপূর্বে গৃহাভ্যন্তরে যে ক্ষুদ্র কামরাখানি পাইয়াছিলাম প্রেমের অঙ্কুরোদগম ঘটিবার ফলে তাহা ত্যাগ করিয়া ধরণীর আলো-বাতাস খাইতে যাইবার সাধ মনোমদ্ধে জাগিতনা অথচ তটিনী ধারে গমন করিলে নীড়ে ফেরত আসিতেও মন চাহিতনা, হালকা দোটানার অন্তর্ভুক্ত হইয়া সমুদ্রগামী স্রোতস্বিনীর ন্যয় জীবন অতিবাহিত হইতে লাগিলোপাঠশালার পানে গমন করিতে এতোটুকু পিছুটান রহিলনা অথচ পড়ালেখায় বিন্দুমাত্রও মনোযোগ স্থাপন করিতে পারিলামনা, পাঠশালার সময় হইবার অপেক্ষায় থাকিতাম কি কারনে থাকিতাম তাহা পাঠকগণ নিশ্চয় বুঝিয়া গিয়াছেন কেননা বালির সহিত দেখা হইবার উপযুক্ত স্থানছিল কেবলই পাঠশালা ক্লাশের অনেকেই ব্যাপারখানা টের পাইয়া কানাকানি করিতে লাগিল অনেকেই তাচ্ছিল্য করিয়া বলিতে লাগিল বালি নাকি মোর পানে চাহিয়া রয়!! হাঁসির পাত্রে পরিণত হইলাম তবুও দমিলামনাইহার মধ্যে একখান ব্যাপার মোর নজরে আসিয়া উপস্থিত হইলো- বালিরে দেখিলাম ক্লাশ শেষে নারীদের কমনরুমে না গিয়া দ্বিতীয় তলার সিঁড়িখানা ধরিয়া ঠাই দাঁড়িয়ে থাকা শুরু করিল স্যার হাজারো নিষেধ করিবার সত্ত্বেও একচুল নড়িতে দেখিলাম না আমিও তাহারে দেখিবার লোভ সামলাইতে না পারিয়া পুনঃপুনঃ ক্লাশের সমাপ্তির অপেক্ষা করিতে লাগিলাম ক্লাশের উপর হইতেও মনোযোগ হারাইলাম ভাবিলাম আলগা হাওয়া লাগিল বুঝি গায়। 

বালি, ১ম পর্বঃ প্রেমের অঙ্কুরোদগম


গল্পের মূল চরিত্র বালি তখন সাত ক্লাশে পড়িতআমি ছিলাম সদ্য নয় ক্লাশে পদার্পণ করা অনভিজ্ঞ এক ছাত্র তখন অব্দি নারী ছিল মোর চক্ষুশূল যাহারা আলিনগর স্কুল ও কলেজে বিদ্যা অর্জন করিয়াছেন তাহারা সাত এবং নয় ক্লাশের অবস্থানটা খুবই ভালো করিয়া অনুধাবন করিতে পারিতেছেন মূলত বালিকে লইয়া গল্পের শুরু হইলো স্কুল জীবন হইতেইমস্তকের উচ্চতা ক্ষুদ্র হইতে বৃহৎ আকারে ক্লাশের বেঞ্চ ভাগ করিবার দরুন মোর সিট বসিয়াছিলো পঞ্চম নাম্বার বেঞ্চে যে স্থান হইতে সাত ক্লাশের পেছন দরজায় হরহামেশাই দৃষ্টি গিয়া হাজির হইত সাত ক্লাশের পশ্চাৎ দরজাখানা হইতে এক জোড়া চক্ষু প্রায় মোর পানে খেয়াল রাখিতোআসলেই মোর পানে নাকি মোর পশ্চাতের বন্ধুর পানে খেয়াল রাখিতো তাহা লইয়া দুইজনের অভ্যন্তরে প্রায় তর্ক লাগিয়াই রোহিলো প্রকৃতপক্ষে বালির দৃষ্টি দেখিয়া বোধগম্য ছিলনা আসলেই তাহার দৃষ্টি কার পানে বালির দৃষ্টি যে মোর পানে আবদ্ধ রহে তাহা প্রমাণের লক্ষ্যে আদা-জল খাইয়া নামিয়া পরিলামবালি কখন কোথা গমন করেকোন শিক্ষকের নিকটে পড়িতে যায়তাহার কোন পছন্দের কেহ রহিয়াছে কি নাবালির পেছন পেছন অন্য কেহ লাটিমের ন্যয় ঘোরাঘুরি করে কি নাইত্যাদি ইত্যাদি জানিবার ইচ্ছা লইয়া বালির আপনজনদের নিকটে ধর্না দিতে লাগিলামখেয়াল করিয়া দেখিলাম পড়া-লিখার উপর হইতে মনোযোগ উঠিয়া গেলোখাওয়া- দাওয়ার প্রতি অরুচি জন্মাইতে লাগিলোমানুষের সহিত আচরনে উগ্রতা ভাব প্রকাশ পাইতে লাগিল ইহা দেখিয়া মাতার চক্ষুশূল হইয়া পরিলাম প্রতিনিয়ত নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীনও কম হইতে হইলোনা নিশিতে নিদ্রা হনন হইলোমুখমণ্ডলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ অনুভূত হইলোপোষাক- আসাকে ময়লাভাব ফুটিয়া উঠিতে লাগিলো  বুঝিতে আর বাকী রহিলনা যে প্রেমের অঙ্কুরোদগম ঘটিয়া পরিয়াছে।