Sanowar Hossain


বালি, ৮ম পর্বঃ চুরি হইয়া গেলো কিছু স্মৃতি

পূর্বের পর্বে মোর পিতার দ্বারা চপেটাঘাত প্রাপ্ত হইয়াছিলামচপেটাঘাত প্রাপ্ত হইয়া পাগলামোর মাত্রাটা কমিয়া আসিয়াছিলএমতাবস্থাতে ব্যাচভিত্তিক উদ্যোগ লওয়া হইলো সকলে মিলিয়া স্বপ্নপুরি গমন করিব পরিশেষে ভ্রমণের দিবস আসিয়া উপস্থিত হইলদ্রুত সমাপ্তি টানিবার লক্ষ্যে অভ্যন্তরে কিছু কাহিনীর সংক্ষেপণ ঘটাইলামস্বপ্নপুরি ভ্রমণের সঠিক দিনখানা স্মরণে আসিতেছেনা তবে সেই দিবসে বালির সহিত অনেকক্ষণ যাবত কথা হইয়াছিল অধিক দিবসান্তেস্বপ্নপুরি হইতে ফেরত আসিয়াছিলাম, ফিরিবার কালে বালিকে প্রদানের লক্ষ্যে কিছু উপহার লইয়া আসিয়াছিলামপরবর্তী দিবসে স্বপ্নপুরি হইতে বহন করিয়া নিয়ে আসা উপহার সামগ্রী ক্লাস সমাপ্তি হইবা মাত্র বালিরে প্রদান করিব ভাবিয়া পাঠশালায় উপহার সঙ্গে লইয়া গমন করিলাম এবং সযত্নে আড়াল করিয়া রাখিলাম বলা বাহুল্য যে প্রতিটি ক্লাশ ভাঙ্গিবা মাত্রই ভালোভাবে পরখ করিয়া লইতাম ঠিকঠাক রহিয়াছে কি নাক্লাশ সমাপ্ত হইলে মস্তকের উপরে আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল, দেখিলাম উপহার সামগ্রী কাওরোর দ্বারা গোপন করা হইয়াছে এবং তাহা চিরতরে লুকায়িত হইলো, কে এই কাজ ঘটাইয়াছে তাহা টের পাইলেও শারীরিকভাবে অসমর্থ থাকিবার কারনে কিছুই করিতে পারিনাই শুধুই দুই চক্ষে দেখিয়া থাকিয়া গেলামবালি ঘটনা শুনিয়া বরং সান্ত্বনাই প্রদান করিল তবুও মনখুন্ন হইয়া রহিল ইহা ভাবিয়া যে চুরি হইয়া গেলো কিছু স্মৃতি, স্মৃতি খোয়া গেলো বটে তবে ইহাতে ভালোবাসা বিন্দুমাত্র হ্রাস পাইলনা

বালি, ৭ম পর্বঃ প্রবল চপেটাঘাত

পূর্বেই বলিয়াছিলাম মোর পিতা বিপণীর কর্ম সমাপ্ত করিয়া অধিক নিশিতে গৃহে আসিয়া উপস্থিত হইতপূর্বের ন্যয় সেই নিশিতেও অনেক্ষন বাদে গৃহে আসিয়া উপস্থিত হইল পার্থক্য কেবল মুখমণ্ডলে পরিলক্ষিত হইল বুঝিতে বাকী রহিলনা বালির পিতা মোর পিতার নিকটে নালিশ করিয়াছেপরিষ্কার স্মরণে আসে সময়টা আছিল রমজান মাস, সেহেরী ভক্ষন করিতে উঠিয়া পিতা মোরে জিজ্ঞেস করিয়া বসিল আমি বালিরে চিনি কি না (বালির পিতার নাম উল্লেখ পূর্বক)? ইহাও সত্য যে তখন অব্দি মোর বালির পিতার নাম অজানাই রহিয়াছিলপিতা পুত্রের কথপোকথন শুনিয়া মাতার বুঝিতে আর বাকী রহিলনা কি ঘটিয়াছে ইহার ফলে নারীসুলভ আচরণ করিয়া সারা বাড়ী মাথায় তুলিয়া ফেলিল;  আমিও "চোরের মায়ের বড় গলা" বাক্যটি যে অধিক সত্য তাহার পুনরাবৃত্তি ঘটাইলামএতক্ষণ পিতাজি মোর সহিত স্বাভাবিক ভাবেই বাক্য বিনিময় করিতেছিল তাহার সহিত অধিক উপদেশ দান কিন্তু মাতার সহিত মোর উচ্চস্বরে বাক্য বিনিময় করিতে দেখিয়া আপন বসিবার স্থান হইতে উঠিয়া মোর কপোলে সশব্দে একখান চপেটাঘাত করিয়া বসিলেনচপেটাঘাত খানা এতটাই প্রবল রহিয়াছিল যে পরবর্তীতে মোর পিতৃজন্মে আর একখান ও কপালে জোটেনাইচপেটাঘাত প্রদত্ত হইয়া মনঃক্ষুণ্ণ করিয়া লেপ মুড়ি দিয়া ঘুমাইয়া পরিলামঘুমানোর পূর্বে মোর মাতা তাহার মস্তকে হস্ত রাখিয়া কসম কাটিয়া লইল যাহাতে বালিরে ভুলিয়া যায়পরবর্তী দিবসে ঘুম হইতে উঠিয়া নিশিতে ঘটিয়া যাওয়া ঘটনা স্মরণে আসিবা মাত্র মনোমধ্যে চিনচিন আওয়াজ অনুভূত হইলবালিরে লইয়া ঘুরিতে যাওয়ার পূর্বপরিকল্পনা বিনষ্ট হইলপ্রয়জোনের সাপেক্ষে কয়েক দিবসের তরে পিরিতির আধিক্য বর্জন করিয়া সাধারণের ন্যয় অসাধারণ বেশ ধরিলাম 

বালি, ৬ষ্ঠ পর্বঃ হারানোর ভয়



বালির সহিত সম্পর্ক তখনও অপরিপক্ক মৃত্তিকার ন্যায় কর্দমাক্ত, অধিক কোন কিছুর ফলাফল যে সুমিষ্ট হয়না তাহার প্রমাণ মিলিল কিছু পথ অতিক্রান্ত হইতে না হইতেই- হঠাৎ একদিন ব্যামো বাধিয়া বসিল প্রায় তিন দিবস  বিছানায় অবস্থান লইতে হইল যাহার ফলে পাঠশালায় অনুপস্থিত রহিলামযে বালি দিবসে দুই-তিনখানা পত্র প্রেরণ করিত, অ্যাসেম্বলিতে স্থির নয়নে চাহিয়া রহিত, নদীর বুকে অর্ধগলা পানিতে নামিয়া খুজিয়া বেড়াইত আমি কোন কিনারে অবস্থান করিতেছি, ঘাট হইতে ফিরিবার পথে যে বালি কলস নামাইয়া মোর পাহাড়ে আড়াল হউয়া অব্দি অপেক্ষা করিত, পিতামহর বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইলে  মাঠের কোন প্রান্তে অবস্থান করিতেছি তাহা খেয়াল করিতে করিতে গৃহাভ্যান্তরে প্রবেশ করিত সেই বালি কিরুপে তিন দিবস না দেখিয়া না পত্র প্রদান করিয়া থাকিতে পারিবে? বালি আপনারে সংযত রাখিতে না পারিয়া মোর গৃহের পাশে অবস্থানরত তাহার এক আত্মীয়র হস্ত মারফত এখান পত্র প্রদান করিল দুর্ভাগ্যক্রমে পুস্তকের মলাট ভেদ করিয়া পত্রখানা উন্মুক্ত হইয়া পরিল এবং কয়েক হস্ত ঘুরিয়া বালির পিতার হস্তে গিয়া পরিলসেই দিবস অপরাহ্নে পুনঃরায় বালির পত্র আসিয়া উপস্থিত হইল পত্রখানার মুলভাব ছিল এইরূপ যে- পুরবাহ্নের পত্রখানা পিতাজি কিরুপে যেন পাইয়া গিয়াছে মোর তরফ হইতে যেন পত্রখানা অস্বীকার করা হয়, তবে এইটা জানিয়া খুশি হইলাম যে পত্রে মোর নাম উল্লেখ ছিলনা আর যাহা লিখা হইয়াছিল তাহা ছিল এক বিশালাকার কবিতা, ব্যাপারখানা এড়িয়ে যাবার বিস্তর সময় মিলিল তবুও হারানোর ভয় পাইয়া বসিল যখন শুনিলাম বালির পিতা মোর পিতার কর্ণে ব্যাপার তুলিয়া ধরিয়াছেকিরুপে ব্যাপারখানা পাশকাটাইয়া যাওয়া যায় তাহার চিন্তায় মশগুল হইয়া পরিলাম

বালি, ৫ম পর্বঃ পত্রবিলাস



শুরু হইল পত্র আদান-প্রদান পর্ব, বালির' হস্ত লিখন পাঠ ছিল দুরূহ, পত্রের ভাবার্থ বুঝিবার জন্য একাধিকবার পাঠ ছিল বাধ্যতামূলকছাত্রী হিসেবে বালি যেমনটা ছিল পত্র দেখিলে তাহা খুব সহজেই  অনুধাবন করা যাইত তবুও তাহার পত্র রচনায় এতোটুকু ক্লান্তি ছিলনা এক পত্র হইতে অপর পত্রের দূরত্ব সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা হইত তবে এমনও দিবস গিয়াছে ২-৩ বারও পত্র আসিয়া জুটিতএহেন অবস্থা বিরাজ করিতে লাগিল যে পত্র রাখিবার স্থান আর সঙ্কুলিত হইতেছেনা দেখিয়া কামরার এক কোণের মৃত্তিকা খনন করিয়া অধিক যত্নে পত্রের কিছু অংশ লুকাইয়া রাখিয়া দিয়াছিলামপথে যে সমস্ত পত্র আসিয়া হাজির হইত তাহার অধিকাংশ পথমদ্ধেই পড়িয়া সমাপ্ত করিতামএমনই এক দিবসের স্মৃতিচারণ করিলাম- পূর্বের দিবসের ন্যয় একখান পত্র পাইবা মাত্র বাঁশঝাড়ের অভ্যন্তর দিয়া পড়িতে পড়িতে অতিক্রম করিতেছিলাম পথমদ্ধে পরিচিত একব্যক্তিকে দেখিবা মাত্র পত্রখানা গুটাইয়া মুখোমদ্ধে প্রেরণ করাইয়া চর্বণ করিবা মাত্র গলাধঃকরণ করিয়াছিলাম ফলে ব্যক্তিটার সহিত বাক্য বিনিময় না করিয়া মুখভর্তি হাঁসি দিয়া সরিয়া পরিলাম, পরবর্তীতে প্রশ্নের সম্মুখীনও হইতে হইয়াছিল মুখমদ্ধে কি গোপন করিয়াছিলাম? সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হইয়াছিলাম,পাঠক মনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিতে পারে পরিচিত ব্যক্তিটি কে রহিয়াছিল? পরিচিত ব্যক্তিটি রহিয়াছিল মোর মাতার আপন ভ্রাতা যাহার ফলে গৃহে কানাঘুষা লাগিয়া গেলো কি গলাধঃকরণ করিয়াছিলামআমি কিরূপে তাহাদিগকে বোঝায়তাম যে যাহা গলাধঃকরণ করিয়াছিলাম তাহা ছিল বালির পত্র আর যে বিলাসিতায় ভাসিতেছিলাম তাহা ছিল পত্রবিলাস



বালি, ৪র্থ পর্বঃ অপেক্ষার পরিসমাপ্তি



বালিরে লইয়া অধিক চিন্তার ফল কোনোদিনও সুখকর ছিলনা তাহার প্রমাণ মিলিয়াছিল ১ম সাময়িক পরীক্ষায় গণিতে ফেল করার দরুনযদিও এই মুহূর্তে মোর পড়ার বিষয়খানা গণিত এবং যাহা অন্তিম মুহূর্তে অবস্থানরত তবুও সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলিবার নহেপথিমধ্যে ২য় সাময়িক পরীক্ষা সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল, ১ম সাময়িক পরীক্ষার সিট বসাইবার অভিপ্রায়ে সেইদিন ১২ টার দিকে পাঠশালা ছুটির ঘণ্টা বাজিয়া গেলছুটির ঘণ্টা পাইয়া নিম্ন মস্তকে গৃহের পানে পা বাড়াইলাম, কিছু পথ অতিক্রান্ত হইতেই পশ্চাৎ হইতে জনৈক বালকের মুখে নাম ধরিয়া ডাকার আওয়াজ পাইলামপশ্চাৎ ফিরিয়া বালকটির হস্তে একখানা কাগজ দিখিবামাত্র মোর চক্ষুজোড়া আনন্দে চকচক করিয়া উঠিল হ্যাঁ ইহাই ছিল মোর কাঙ্খিত পত্রখানাপত্রখানা পাইবা মাত্র হৃদয় মাঝারে যে ঢেও খেলিয়া গেল তাহা সমুদ্রের উত্তাল ঢেও কেও হারমানানোর সমতুল্যপত্র পাঠ করিতে মোর তর আর সহিতেছিলনা মনে হইতে লাগিল জনসম্মুখেই উম্মুক্ত করিয়া পাঠ আরম্ভ করিয়া দেইঅধিক কষ্টে আপনারে সংযত করিবাপূর্বক গৃহে প্রবেশ করিবা মাত্র দ্বার রুদ্ধ করিলামরুদ্ধ কামরাতে আবদ্ধ হইয়া অন্ধকারে পত্র খানা লইয়া বক্ষে, পেটে, অংসে ঠোঁটে বারংবার চুম্বনে চুম্বনে ভরাইয়া তুলিলাম, পত্রখানা যে কতবার পাঠ করিয়াছিলাম তাহা গণনযোগ্য নহে, পাঠ করা সমাপ্ত করিয়া বালিসের নিচে রাখিলাম পুনরায় বাহির করিয়া পাঠ আরম্ভ করিলাম অনেক্ষন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিতে থাকিলসেই দিবসে মোর সমস্ত মুখমণ্ডলে আনন্দ যেন আর ধরিলনা পত্রখানা কোথাই রাখিব তাহার উপযুক্ত স্থান মিলিলনা অবশেষে মোর মানিবাগেই স্বযতনে স্থান মিলিলঅপেক্ষার প্রহরের পরিসমাপ্তি ঘটিল ধন্যও হইলাম বটে
           

বালি, ৩য় পর্বঃ প্রত্তুওরের অপেক্ষায়

বালিরে কি রূপে ব্যাপারখানা জানানো যায় তাহা লইয়া ভাবনার নতুন একটা মাত্রা আরম্ভ হইলবলিয়া রাখা ভালো তৎকালীন সময়ে মোর পিতাজির আলিনগর বাজারে একখান খাদ্য দ্রব্যাদির বিপণি রহিয়াছিলো, বিপণিখানা এতটাই প্রচলিত রহিয়াছিলো যে নিশিতে তাহা বন্ধ করিয়া গৃহে ফেরত আসিতে কোন কোন নিশি সমাপ্তির পানে গড়াইয়া পরিতসারাদিনে সংসারের ঘানি টানিয়া ক্লান্তির ছাপ মুখমণ্ডলে আঁকিয়া মাতাও দ্রুত ঘুমাইয়া পরিত, বাকী রহিল মোর কনিষ্ঠ ভ্রাতা যে কিনা সবে মাত্র দুই ক্লাশে পদার্পণ করিয়াছিল, তাহার আর কত নিশি জাগিবার অভ্যাস থাকিবে তাহা ব্যাখ্যা না করিলেও চলিবেইহার ফলে গভীর নিশিতে বালিরে লইয়া ভাবনার সাগরে নিমজ্জিত হইবার বিস্তর সময় মোর কপালে জুটিয়া যাইত, অতঃপর গভীর নিশিতে ফাঁক বুঝিয়া পত্র রচনায় মগ্ন হইতামপত্র রচনা করিতে গিয়া কি পরিমান কাগজ যে উৎচ্ছৃষ্ট করিয়াছি তাহা গাহিয়া, শুধাইয়া উপযুক্ত প্রকাশ ঘটানো মোর নগণ্য মেধাতে বেমানান শুধু এতোটুকুই বলিতে পারি মাঝে মধ্যে উৎচ্ছৃষ্ট কাগজ ফেলিতে গিয়া ঝামেলাও কম পোহাইতে হইনাইঅধিক ভাবনা চিন্তার সংমিশ্রণ ঘটাইয়া যে একখানা পত্র দাঁড় করাইলাম তাহা বাধ সাধিল উপযুক্ত মাধ্যমের অভাবে, কি করিয়া পত্রখানা বালির নিকটে পৌঁছানো যাই সেই ভাবনায় অস্থির হইয়া পরিলামবক্ষ পকেটে পত্রখানা লইয়া কয়েক দিবস যাবৎ ঘুরঘুর করিয়া ঘুরিয়া বেড়াইলাম ঠিকই কিন্তু উপযুক্ত কাজের কাজ কিছুই করিতে পারিলাম নাভাবনায় পরিয়া গেলাম তবে কি মোর চেষ্টা বৃথা হইয়া যাইবে!!! অবশেষে অধিক চেষ্টার ফলে মোর এক আত্মীয়কে পত্রখানা পৌঁছানোর জন্য রাজি করাইতে সক্ষম হইলাম এবং তাহার মারফত পত্রখানা প্রদান করিতেও সক্ষম হইলামপরবর্তী দিবসে সংবাদ আসিল বালি মোর পত্র গ্রহণ করিয়াছে, সংবাদখান শুনিয়া কিরুপ আনন্দিত হইয়াছিলাম তাহা বলিয়া বুঝাইতে পারিবনা তবে হ্যাঁ বক্ষে মোর সাহসের সঞ্চার ঘটিল, পুলকিত হৃদয় লইয়া সদানন্দে প্রত্তুওরের অপেক্ষায় বসিয়া রহিলাম

বালি, ২য় পর্বঃ আলগা হাওয়া

অঙ্কুরোদগম কেমন করিয়া বিস্তার লাভ করিতে লাগিল তাহা লেখকগণের ন্যায় বিস্তররূপে তুলিয়া ধরিতে না পারিলেও ক্ষুদ্রাকারভাবে তুলিয়া ধরিতে পারিবো এই বিশ্বাসখানা মোর রহিয়াছে, ইতোপূর্বে গৃহাভ্যন্তরে যে ক্ষুদ্র কামরাখানি পাইয়াছিলাম প্রেমের অঙ্কুরোদগম ঘটিবার ফলে তাহা ত্যাগ করিয়া ধরণীর আলো-বাতাস খাইতে যাইবার সাধ মনোমদ্ধে জাগিতনা অথচ তটিনী ধারে গমন করিলে নীড়ে ফেরত আসিতেও মন চাহিতনা, হালকা দোটানার অন্তর্ভুক্ত হইয়া সমুদ্রগামী স্রোতস্বিনীর ন্যয় জীবন অতিবাহিত হইতে লাগিলোপাঠশালার পানে গমন করিতে এতোটুকু পিছুটান রহিলনা অথচ পড়ালেখায় বিন্দুমাত্রও মনোযোগ স্থাপন করিতে পারিলামনা, পাঠশালার সময় হইবার অপেক্ষায় থাকিতাম কি কারনে থাকিতাম তাহা পাঠকগণ নিশ্চয় বুঝিয়া গিয়াছেন কেননা বালির সহিত দেখা হইবার উপযুক্ত স্থানছিল কেবলই পাঠশালা ক্লাশের অনেকেই ব্যাপারখানা টের পাইয়া কানাকানি করিতে লাগিল অনেকেই তাচ্ছিল্য করিয়া বলিতে লাগিল বালি নাকি মোর পানে চাহিয়া রয়!! হাঁসির পাত্রে পরিণত হইলাম তবুও দমিলামনাইহার মধ্যে একখান ব্যাপার মোর নজরে আসিয়া উপস্থিত হইলো- বালিরে দেখিলাম ক্লাশ শেষে নারীদের কমনরুমে না গিয়া দ্বিতীয় তলার সিঁড়িখানা ধরিয়া ঠাই দাঁড়িয়ে থাকা শুরু করিল স্যার হাজারো নিষেধ করিবার সত্ত্বেও একচুল নড়িতে দেখিলাম না আমিও তাহারে দেখিবার লোভ সামলাইতে না পারিয়া পুনঃপুনঃ ক্লাশের সমাপ্তির অপেক্ষা করিতে লাগিলাম ক্লাশের উপর হইতেও মনোযোগ হারাইলাম ভাবিলাম আলগা হাওয়া লাগিল বুঝি গায়। 

বালি, ১ম পর্বঃ প্রেমের অঙ্কুরোদগম


গল্পের মূল চরিত্র বালি তখন সাত ক্লাশে পড়িতআমি ছিলাম সদ্য নয় ক্লাশে পদার্পণ করা অনভিজ্ঞ এক ছাত্র তখন অব্দি নারী ছিল মোর চক্ষুশূল যাহারা আলিনগর স্কুল ও কলেজে বিদ্যা অর্জন করিয়াছেন তাহারা সাত এবং নয় ক্লাশের অবস্থানটা খুবই ভালো করিয়া অনুধাবন করিতে পারিতেছেন মূলত বালিকে লইয়া গল্পের শুরু হইলো স্কুল জীবন হইতেইমস্তকের উচ্চতা ক্ষুদ্র হইতে বৃহৎ আকারে ক্লাশের বেঞ্চ ভাগ করিবার দরুন মোর সিট বসিয়াছিলো পঞ্চম নাম্বার বেঞ্চে যে স্থান হইতে সাত ক্লাশের পেছন দরজায় হরহামেশাই দৃষ্টি গিয়া হাজির হইত সাত ক্লাশের পশ্চাৎ দরজাখানা হইতে এক জোড়া চক্ষু প্রায় মোর পানে খেয়াল রাখিতোআসলেই মোর পানে নাকি মোর পশ্চাতের বন্ধুর পানে খেয়াল রাখিতো তাহা লইয়া দুইজনের অভ্যন্তরে প্রায় তর্ক লাগিয়াই রোহিলো প্রকৃতপক্ষে বালির দৃষ্টি দেখিয়া বোধগম্য ছিলনা আসলেই তাহার দৃষ্টি কার পানে বালির দৃষ্টি যে মোর পানে আবদ্ধ রহে তাহা প্রমাণের লক্ষ্যে আদা-জল খাইয়া নামিয়া পরিলামবালি কখন কোথা গমন করেকোন শিক্ষকের নিকটে পড়িতে যায়তাহার কোন পছন্দের কেহ রহিয়াছে কি নাবালির পেছন পেছন অন্য কেহ লাটিমের ন্যয় ঘোরাঘুরি করে কি নাইত্যাদি ইত্যাদি জানিবার ইচ্ছা লইয়া বালির আপনজনদের নিকটে ধর্না দিতে লাগিলামখেয়াল করিয়া দেখিলাম পড়া-লিখার উপর হইতে মনোযোগ উঠিয়া গেলোখাওয়া- দাওয়ার প্রতি অরুচি জন্মাইতে লাগিলোমানুষের সহিত আচরনে উগ্রতা ভাব প্রকাশ পাইতে লাগিল ইহা দেখিয়া মাতার চক্ষুশূল হইয়া পরিলাম প্রতিনিয়ত নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীনও কম হইতে হইলোনা নিশিতে নিদ্রা হনন হইলোমুখমণ্ডলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ অনুভূত হইলোপোষাক- আসাকে ময়লাভাব ফুটিয়া উঠিতে লাগিলো  বুঝিতে আর বাকী রহিলনা যে প্রেমের অঙ্কুরোদগম ঘটিয়া পরিয়াছে। 


আমি কি স্বাধীন?

আমি কি স্বাধীন?
জানবার ইচ্ছে প্রবলভাবে আমায় পেয়ে বসলো
তারই ধারাবাহিকতা আমায় টেনে নিয়ে গেলো নদীর নিকটে
নদীকে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, আমি কি স্বাধীন?
নদী তাচ্ছিল্লেরহাঁসি হেসে আমায় বলেছিল
তুমি কি আমার মতো মুক্ত ভাবে প্রবাহিত হতে পার?
আমি এতোটুকু অপমানিত হয়নি
কেবল অবনত শিরে উত্তর করেছিলাম “না তো

সারাক্ষণ ভেবেছি বোঝাতে পারিনি মনকে
ধুর এইভাবে কি বসে থাকা যায়?
উত্তরের খোঁজে আবার বেরিয়ে পড়েছিলাম
এইবার উদ্দেশ্য ছিল বনের কাছে জানবার
আমি কি স্বাধীন?
বন আমায় গর্বে ভরপুর হয়ে মাথা উঁচু করে বলেছিল
তুমি আমার মতো অবাধ ভাবে বেড়ে উঠতে পারকি?
আমি আবার না বোধক উত্তর দিয়ে ছুটে এলাম ঘরে
ক্লান্ত দেহ নিয়ে ফিরে আসতে হল  যখন
উপভোগ্য অনেক কিছুই খেয়াল করলাম তখন,

যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে বলতে পারেনা কথা
কাদের জন্য স্বাধীনতা? কারে বলে স্বাধীনতা?
স্বাধীনতা!! কেন যে তুমি এতোটা পরাধীন
ঢাক পিটিয়ে তোমায় প্রচার করি ঠিকই
সুবিচারে তুমি বড্ড বেশী উদাসীন
তা নাহলে বারবার কেন বলবে মনে
আমি কি স্বাধীন? সত্যিই কি আমি স্বাধীন?



"দেখিলাম , আমি বালিরে আজ প্রাণ ভরিয়া দেখিলাম"

#সেই সুগঠিত ললাট,সেই প্রশস্থ চক্ষু , সেই সুদূর-প্রসারী লেচন, সেই কৃষ্ণ কালো ভ্রু-যুগল , সেই কম্পমান অধর, সেই কিঞ্চিৎ প্রশস্থ কপোল, সেই ক্ষুদ্রাকার গ্রীবা, সেই ওষ্ঠকোণে মিশিয়া থাকা অপরূপ হাঁসি, ইহাকে সৌভাগ্যই বলিব কেননা বহুদিবস গত হইবার পর হঠাৎ করিয়া বালির সহিত মোর দেখা হইয়া গেল- "দেখিলাম , আমি তাহারে (বালির) প্রাণ ভরিয়া দেখিলাম" আম্র কাননের আধারে মিশে যাওয়া অব্দি এক বিন্দু দৃষ্টি সরাইতে পারিলাম না এখনও মনোমাঝে তাহার (বালির) সম্মুখ দিয়া গমন করিবার চিত্র বারংবার প্রতিফলিত হইতে আছে
উপলব্ধিঃ 
"
মোর সম্মুখ দিয়া আপন মনে গমন করিস, করিতে পারিনাই মানা, 
ইহাও অবগত গভীর নিশিতে পুনশ্চ আসিয়া স্বপ্নে দিবি হানা" - তুলা
সপ্নঃ তোরে সঙ্গী করিয়া মোর পুনরায় গড়িয়া উঠা তেপান্তরের পানে পদ দুইখানা বাড়াইব, যেথা গমন করিতে পথও মাঝারে দৃষ্টিগোচর হইবে সারিবদ্ধ বৃক্ষাদি (শিশু, তাল, ই কলিক্টর) ইত্যাদি ইত্যাদি, সেথা তুই মোর শ্বাস প্রশ্বাসে মিশিয়া রহিবি ইহার ন্যায় মুক্ত নিঃশ্বাস মোর হাজারো ধরণী মাঝারে কোথাও মিলিবেনা
বি.দ্রঃ তেপান্তর মাঝে গড়িয়া ওঠা কুঠিরখানা বাস্তবেই মোর নবনির্মিত ক্ষুদ্র কুঠির, বাকীটুকুন মোর আকাশ কুসুম চিন্তাধারা যেথা বিস্তার করিয়া থাকা নামখানা "বালি"

পুঞ্জিভুত রসঃ আজকে বালির নামে ৪৪ টাকা উৎসর্গ করিলাম কেননা গৃহ হইতে ফিরিবার কালে পথও মধ্যে যানবাহনের উপরে বালির কথা ভাবিতে ভাবিতে কখন জানি ঘুমাইয়া পরিয়াছিলাম ইহা দেখিয়া বাসের কন্ট্রাক্টার আসিয়া আর ঘুম হইতে জাগিয়া তুলেনাই ফলাফল আমিও আর তাহারে পয়সা প্রদান করিনাই