Sanowar Hossain


বালি'র জবানিকা পর্বঃ বালি রবে নীরবে

বালি আরম্ভের প্রাক্কালেই বলিয়াছিলাম ইহা নেহাত খেলার বসে লিখিয়া ফেলা এক ক্ষুদ্রাকার গল্পকথা কিন্তু একটুখানি বিস্তৃতভাবে চিন্তার প্রতিফলন ঘটাইলে বুঝিতে সক্ষম হইবেন প্রকৃতপক্ষেই কি ইহা নেহাত এক গল্প? বালি রচনার ক্রান্তিলগ্নে আসিয়া বলিয়া ফেলিতে পারিতাম ইহা প্রকৃতপক্ষেই গল্প তাহাতে হইতবা কেও কেও সাময়িক আনন্দ লাভ করিতে পারিত কিন্তু তাহাতে মোর অতিকায় এক মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা হইবে ফলে পুনঃরায় উচ্চারণ করিলাম ইহা মোর জীবনেরই গল্প মোর জীবন হইতেই নেয়া অনবদ্য সত্য এক কাহিনী, অনেকেই প্রশ্ন করিয়া বসিয়াছেন পর্বসমূহ কি আপনার দ্বারাই রচনা করা? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করিয়াই তাহলে ক্ষ্যান্তলাভ করিব, আপনাদিগকে বলি রচনার ভাষা বঙ্কিমের চনাবলীর অবদান ঠিকই কিন্তু সমস্ত কাহিনী মোর ২০০৫ সালের প্রারম্ভ হইতে ২০০৮ সালের প্রারম্ভের মধ্যে ঘটিয়া যাওয়া গল্প বিশেষ বালি নামকরণটাও মোর একচ্ছত্র অবদান, এই বালি মোর জীবনের সহিত এতটাই ওতপ্রোতোভাবে জড়িত যে তাহা সমুদ্রতীরবর্তী বালির সহিত সমতুল্য  সমুদ্রতীরবর্তী বালির সহিত সমতুল্য এই কারণেই বলিলাম যে সমুদ্রতীর হইতে মেশিনদ্বারা সমস্ত বালি অপসারণ করিয়া ফেলিলেও যে অবশেষটুকুন অবশিষ্ট রহিয়া যাইবে তাহা বালির আস্তরণ, মোর দেহ হইতেও সমস্ত অংশবিশেষ অপসারণ করিয়া ফেলিলে যেটুকুন অবশিষ্ট থাকিবে তাহাও ওই বালি, সমুদ্রে গমন করিতে অক্ষম? উষ্ণ মরুভূমিতে গমন করিয়া থাকেন? সেথা গেলেও একই চিত্রের  প্রতিফলন ঘটিবে, সত্যি   
মানব জীবন অনেকটাই গদ্য, পদ্য এবং উপন্যাসের সমন্বয়ে গঠিত, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অধিকতর গল্প লইয়া জীবন গদ্যের ন্যায় আরম্ভ হইয়া থাকে মধ্যবর্তী সময়ে আসিয়া কখনওবা ছন্দপতন ঘটিয়া থাকে, সমাপ্তিলগ্নে আসিয়া গদ্য, পদ্য সমস্তকিছুই মিলিত হইয়া উপন্যাসের ন্যায় একখান রুপ ধারণ করিয়া থাকে যাহার চূড়ান্ত উদাহরণ হইল  মোর বালি স্মৃতিসমূহ কখনও একত্রে গুছাইয়া রচনা করিয়া ফেলা সম্ভবপর নহে কেননা সমস্ত স্মৃতি একত্রে মনমদ্ধে আসিয়া ভীড় জমাইবেনা জীবনে কখনও পূর্বের বসন্তও ফিরিয়া আসিবেনা বাসনা থাকিলেও বিভাষিকার কারণে প্রাণাধিক প্রিয় মানবীর নিকটেও পৌঁছনো সম্ভবপর নহে কেননা সে তো বেশ সাচ্ছন্দেই রহিয়াছে তাহাতে মোর অনুপ্রবেশ বড়ই বেমানান যাহার ফলে আপনারে গুটাইয়া লইয়াছি জীবনে কাওকে না কাওকে পাইয়া যাইব ঠিকই কিন্তু ইহাই মোদ্দা কথা নহে আপনি যাহাকে পাইয়াছেন তাহাকে জীবনের ক্রান্তিলগ্ন অব্দি পাওয়াটাই মোদ্দা কথা
প্রকৃতপক্ষে বর্তমানকালের সম্পর্কসমূহই সৃষ্টি হইতেছে মিথ্যার উপরে ভিত্তি করিয়া আর মিথ্যার দ্বারা তৈরিকৃত সম্পর্কসমূহ মিথ্যার দ্বারাই করুণ পরিসমাপ্তি বরণ লাভ করিয়া থাকে বর্তমান কালের যুগলদের অভ্যন্তরে এমন কেহ আছে বলিয়া মোর বিশ্বাস হইবেনা যাহাদের জীবনে বালির ন্যায় সুখস্মৃতি বিদ্যমান ইহা এই কারণেই বলিলাম যে এই চার বছরের ক্ষুদ্র জীবনে বালির সহিত মোর এতোটুকুও দ্বন্দ্ব হয়নাই

বালির বিবাহ হইয়া যাইবার পরবর্তীতে চার তৃতীয়াংশ স্মৃতি লইয়া তাহা অগ্নিতে নিক্ষেপ করত চিরতরে নিশ্চিহ্ন করিতে গিয়াছিলাম অবশেষে একখানা লেমেলেটিং সম্বলিত তাসবির ভস্মীভূত করিতে গিয়া ভস্মীভূত হইবার কালে আপনার অজান্তে হস্তে আসিয়া লাগিয়া গেল ফলাফল যাহা ঘটিল হস্তে তাৎক্ষণিক ফোস্কা লইয়া লইল গিয়েছিলাম স্মৃতিচিহ্ন নিঃশেষ করিতে কিন্তু স্মৃতি কি নিঃশেষ হইবার জিনিস? আরও অধিক হারে জাঁকিয়া বসিয়াছে যাহা অদ্যবধি মোর শরীরে বিদ্যমান আজ বহুকাল হইয়া গিয়াছে, বালি ছাড়িয়া গিয়াছে আপনারে নব্যরূপে সাজাইতে ইচ্ছের তরী লইয়া অচেনা সমুদ্রে প্রতিনিয়ত পাড়ি জমাইতেছি কেনই বা আপনারে বাস্তবিক চিন্তাধারা হইতে বিস্তর দূরত্বে রাখিয়াছি তাহা সম্পূর্ণটা মোর অজানা তবে মাঝেমাঝে মনে হয় হইত তাহাকে অধিক ভালোবাসি বলিয়াই, মনমধ্যে জমাইয়া রাখা আবেগগুলাকে বহুকাল পূর্বেই শ্বাসরোধ করিয়া হত্যা করিয়াছি তবুও তাহারা বারংবার পুনর্জীবিত হইয়া পড়ে আর ভেতর হইতে বালি টাইপের লেখা হুমড়ি খাইয়া অনাবৃত হইয়া পড়েজমিয়া থাকা অনুভূতি সমূহ সর্বদাই অদ্ভুত, তাহার চাইতে অধিক অদ্ভুত হইতেছে জমিয়া থাকা শেষ স্পন্দন যাহা বালির জবানিকার দ্বারা ঘটাইলাম প্রকৃতপক্ষে ইহা সমাপ্ত হইবার নহে কিছু দিবসের তরে থমকাইয়া যাইবে হইত, পুনরায় মণমধ্যে জাগিয়া উঠিবে নব নাম ধরিয়া দেহে যতদিন অব্দি প্রাণ রহিবে বালি রহিবে নীরবে..................পরিসমাপ্তি ঘটিল 


বালি ১১তম পর্বঃ বালির বিয়ে

গত নিশিতে বালির গায়ে হলুদ সম্পন্ন হইয়াছে, বালি হস্তরাঙাতে গিয়া তাহা বারংবার তুলিয়া ফেলিয়াছে কান্না করিয়া শয়ন করিয়াছে দ্রুতই ইহা কর্ণে আসিয়া পৌছলো নব্যগন্তব্ব্যে গমন করিবার প্রতীক্ষায় যে অপেক্ষমান তাহার সম্পর্কে এই সমস্তকিছু শ্রবণ করিয়া এহেন পরিস্থিতে মোর কি উচিৎ আর কি অনুচিত তাহা মোর দ্বারা পরিষ্কার করিয়া ওঠা সম্ভবপর হইলনাকেবলমাত্র সমালোচনার হস্ত হইতে রক্ষাপাইতে আর বন্ধুদের গুলির ন্যয় বাক্যের হস্ত হইতে আপনারে সুরক্ষিত রাখিতে আপনা হইতে পলায়ন করিবার রাস্তা খুঁজিতে লাগিলামভাগ্য সুপ্রসন্ন রহিয়াছিল বালির বিবাহের দিবসেই মোর আপন মামানীর কনিষ্ঠভ্রাতার বিয়ের অনুষ্ঠানের দাওয়াত রহিয়াছিল এবং তাহাদের তরফ হইতে মোরে সঙ্গে লইয়া যাইবার এক চক্রান্তও চলিতেছিল আসলেই তাহা মোর আশীর্বাদ হইয়া উঠিলবালির বিবাহের দিবসে অতি প্রভাতে বড় মামানিরে সঙ্গে লইয়া সেজো মামার শ্বশুরালয় টগরইলে গিয়া উপস্থিত হইলামবিয়ে বাড়ীতে কুটুম্বগণের সহিত আপনারে মিলাইয়া ফেলিতে চাহিলাম এবং কখনও অল্প কখনওবা ভারী কর্মের দ্বারা আপনারে ব্যাতীব্যস্তই রাখিলাম যাহার ফলে সমস্ত দিবসে মনমদ্ধে কয়েকবার মাত্র বালি আসিয়া হানা প্রদান করিবার সুযোগ পাইল কুটুম্বগণ বিয়ে বাড়ী হইতে বিদায় লইলে নিজেও আপন গৃহে ফেরত আসিবার জন্যে উদগ্রীব হইয়া উঠিলাম কিন্তু বাধসাধল মোর নানীঅধিক দিবসান্তে তাহাদের গৃহে গমন করিবার কারনে মোরে কয়েক দিবস থাকিয়া যাইতে আচ্ছা করিয়া ধরিয়া বসিলআপনার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাইয়া কয়েকদিবস থাকিয়া যাইতে মনস্থির করিয়া ফেলিলামথাকিয়া যাইব শ্রবণ করিয়া মোর কনিষ্ঠ মামা, খালারা প্রচণ্ড খুশিই হইলো সকলে মিলিয়া খোশগল্প আর সিনেমা দেখাতে মগ্নহইলামভয় যে রাত্রিকে দেখিয়া তাহা সম্মুখে আসিয়া পরিল নৈশভোজ সারিয়া কে কোথায় ঘুমাইবে তাহা বরাদ্দ হইতে লাগিলদুর্ভাগ্যক্রমে মোর শয়নের স্থান হইল সদ্য বিবাহ করা মামার বাসর ঘরেঅনেকটায় কাঁকতলিয় হইয়া গেল ব্যাপারখানা কেননা সেই নিশিই যে বালির বাসর নিশিকিছু নিশি অতিক্রান্ত হইতেই মোর দম বন্ধ হইয়া আসার উপক্রম হইলে অধিক মশার দোহাই প্রদান করিয়া অন্য কক্ষে গিয়ে শয়নের মনস্থির করিলে নানী আসিয়া কয়েল জ্বালাইয়া দিয়া চলিয়া গেলো প্রকৃত কষ্টটা কেও ধরিতেই পারিলনাসেই নিশিতে মোর নিদ্রা হনন হইলো সমস্ত নিশি এপাশ ওপাশ করিয়া কাটাইয়া দিলামফজরের ওয়াক্তে ঘুম চাপিয়া আসিল স্বপ্নে বালির দর্শন পাইলাম সমস্তকিছু মিলিয়া গেলো শুধু জীবনের তফাৎটুকুই কেবল রহিয়াগেল বিস্তর সেই জীবনের দূরত্ব কেননা আজই যে বালির বিয়ে 

স্মৃতি নামক জিনিসটা প্রায় স্ক্রিপ্টের ন্যায়, হযবরল করিয়া কোথাও না কোথাও রচিত থাকিবে ঠিকই কিন্তু উহাতে অর্থ ব্যাতীত অধিক পরিমাণ বর্ণও জমাইয়া থাকিয়া যাইবে ইহা হইলো মোর আবেগের উক্তি তবে ভালোবাসা লইয়া রচিত হযবরল বাক্যগুলা যদি আমেরিকার ম্যাথমেটিশিয়ান আলার্ন টুরিং এর টুরিং মেশিনের এক প্রান্তে প্রবেশ করানো সম্ভবপর হইত তাহা হইলে হযবরলর অর্থসমূহ অধিক সুদর্শন হইয়া উন্মুক্ত হইয়া পড়িত ইহা মোর অধিক বিশ্বাসগত হইয়া পরা ব্যক্তিটিকে উদ্দেশ্য করিয়া রচিত পত্রগুলো আপনার অজান্তে একা একা বারংবার পঠিত হইতে থাকে হইতবা অশ্রওঝরিয়া পড়ে অজান্তেই, অক্ষির ধবল জল অশ্রুর সহিত মিশিয়া কৃষ্ণকার হইয়া টপাটপ ধ্বনি তুলিয়া মৃত্তিকাতে নিমজ্জিত হইয়া পড়ে..................      

বালি ১০ম পর্বঃ আগামীকল্য বালির গায়ে হলুদ

ফলাফল বিপর্যয় ঘটিবার কারনে নিজের সমস্ত ইচ্ছে দমিত রাখিয়া গ্রামের কলেজেই এন্ট্রাস পড়িতে থাকিয়া গেলাম, প্রকৃতপক্ষে বলিতে গেলে উচ্চমাধ্যমিক পড়িবার কোন আকাঙ্ক্ষায় মোর রহিয়াছিলনা একান্ত বাধ্য হইয়াই পুনঃরায় আরম্ভ করিতে হইলমহাবিদ্যালয়ে গমন করিতাম ঠিকই কিন্তু তাহা বিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্যে বলিলে ভুল বলাই হইবেঅধিক সময় বন্ধু-বান্ধবের সহিত লাইব্রেরীতে অযথায় বসিয়া আড্ডাতে মগ্ন থাকিতাম অবশ্যই ইহার পশ্চাতেও একটা কারণ রহিয়াছেকারণটা এইরূপ যে আমি মহাবিদ্যালয়ে পদার্পণ করিলেও বালি কিন্তু তখন অব্দি মাধ্যমিকের গণ্ডিতেই আবদ্ধ রহিয়াছিল কিন্তু বিদ্যালয় আর মহাবিদ্যালয়ের ভবন সামান্য দূরত্বে অবস্থান করিবার দরুন পাঠশালার ক্লাশ ভগ্ন হইলেই পানি পানের ছুতো দ্বারা মহাবিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে গ্লাস লইতে আসিয়া উপস্থিত হইতমজার বিষয় হইল বালিরে লাইব্রেরীতে প্রবেশ করিতে দেখিলেই মোর সমস্ত বন্ধু-বান্ধব রুম হইতে প্রস্থান লাভ করিত যাহার ফলে অধিক সময় ধরিয়া খোশআমোদ করিবার বিস্তর সময় পাইয়া যাইতাম যাহার ফলে বেশ আনন্দেই কাটিতেছিল মহাবিদ্যালয়ের দিনগুলোমার্চ/০৮ হঠাৎ একটা সংবাদ পাইয়া  একদিবসে বালি পত্রমারফত ডাকিয়া পাঠাইল এবং উপযুক্ত স্থানে গিয়া বালির সহিত সাক্ষাৎ করিলাম লক্ষ্য করিয়া দেখিলাম বালির সমস্ত মুখমণ্ডল জুড়িয়া চিন্তার কৃষ্ণাকার এক রেখা চলাচল করিতেছে দেখিবা মাত্র ভীত হইলাম মোর ধারণাও সত্য হইল বালি যাহা বলিল তাহাতে মস্তকের উপরে আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল কথা গুলা এইরূপ যে বালির বিবাহ স্থির হইয়া গিয়াছে ২৩ মার্চ ০৮, পাত্র সামরীক বাহিনীতে কর্মরতদ্রুত সমাপ্ত করিবার উদ্দেশ্যে কিছু কথা অব্যক্তই রাখিয়া দিলাম দেখিতে দেখিতে বালির গায়ে হলুদের ক্ষণ সম্মুখে আসিতেছে বালির গায়ে হলুদের পূর্বের দিবসে মোর গৃহের পাশে তাহার আত্মীয়ার গৃহে গ্রাম্য রীতিতে থুবরা খাইতে উপস্থিত হইলো এমতাবস্থায় জানালার ধারে গলির দিকে সম্মুখফিরিয়া বসিয়া রহিয়াছিলাম বালিরে দেখিলাম মোর জানালার দিকে সম্মুখ ফিরিয়া দাঁড়াইয়া পড়িল দৃষ্টি কতটা তুখোড় হইলে এতোদূর অব্দি নজর আসিয়া পরে তাহা মোর অজানা, মাতাকে ঝাড়ু হস্তে লইয়া গলি পরিষ্কার দেখিলাম বালি মাতারও নেত্রগোচর হইল এবং মাতা মোরে ডাক দিয়ে বলিলো হলুদ শাড়ী পরিধান করা একটা সুন্দরী রমণী দেখিয়া যাইতে যাহা শ্রবণ করিয়া রাগে মোর গা জ্বলিয়া যাইতে লাগিল মনে মনে বলিলাম মাতা মোর জীবনের আগামীকল্য বালির গায়ে হলুদ

বালি ৯ম পর্বঃ ফলাফল বিপর্যয়

২০০৭ সাল, পথিমধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা দরজায় আসিয়া উপস্থিত হইল। মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যার চাপে বালিরে কয়েক দিবস হইতে ভুলিয়া থাকিবার চেষ্টাই করিলাম, দেখা করাতো বন্ধ করিলাম করিলাম পত্র লিখার ও অবকাশ পাইয়া উঠিলামনা। এহেন অবস্থাতে বালি কি ভাবিতেছিল তাহা মোর অজানায় রহিয়া গেলো শুধু একদিবসে মোরে এক আত্মিয়ের আলয়ে গমন করিতে দেখিয়া অশ্রুসিক্ত আঁখি লইয়া বালি মোর সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইলো, এমতাবস্থায় মোর সম্মুখে বালিরে দেখিয়া অপ্রস্তুত হইয়া জিজ্ঞেস করিয়া বসিলাম কেমন আছো? প্রশ্নটা শুনিয়া বুঝি বালির বুক ফাটিয়া চৌচির হইয়া পড়িল অশ্রু আর ধরিয়া রাখিতে পারিলোনা সে। মনমদ্ধ্যে সান্ত্বনার বাণী হাতড়াইয়া ফিরিতে লাগিলাম, নিমিষেই কেমন একটা থমথমেভাব বিরাজ করিয়া উঠিল। থমথমে ভাব হইতে মুক্তি দিতে নিজেই বলিয়া উঠিলাম ভয় নেই বালি, পরীক্ষার চাপে অতিষ্ঠ হইয়া রহিয়াছি শেষ হলেই স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়া আসিব। উক্তিটি শুনিয়া বুঝি বালির বুক হইতে হাজারমণ ওজনের ভার নামিয়া গেল ওষ্ঠকোণে কিঞ্চিৎ হাঁসি ফুটিয়া উঠিতে দেখিয়া নিজেও একটুখানি নিশ্চিন্ত হইলাম। অধিকচাপ তাহার সহিত কিঞ্চিৎ ব্যামো মাথায় লইয়া মাধ্যমিক পরীক্ষা সমাপ্ত করিলাম। পরীক্ষার সমাপ্তি আর ফলাফলের মধ্যবর্তী ঘটনা সংক্ষেপিত করা হইলো। ১২ জুন ২০০৭ ফলাফল প্রকাশের তারিখ আসিয়া উপস্থিত হইলো যদিও জনসম্মুখে প্রকাশ করিতে লজ্জায় মাথা কাটিয়া যাইতেছে তবুও বলিয়া ফেলিলাম- মাধ্যমিক ফলাফলে আমি একজন এ প্লাস প্রত্যাশী ছাত্র হিসেবেই বিবেচিত রহিয়াছিলাম কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পরবর্তীতে যাহা জানিতে পারিলাম তাহা আমি কেন মোর পিতা-মাতা সহ শিক্ষককুল ও বিসৃত হইয়াছিল প্রকৃতপক্ষে বলতে গেলে এই ফলাফল কাহারও কাম্য ছিলনা। ইহার পশ্চাতের কারণ হিসেবে পরিবারের অনেকে বালিরেই দোষারোপ করিল ইত্যাদি ইত্যাদি। সকলেই যখন মাধ্যমিকের ফলাফল লইয়া উৎফুল্ল আমি তখন গৃহাভ্যান্তরে আবদ্ধ, লজ্জাতে মুখ দেখানো দায় হইয়া পড়িল যাহারা ভালো ফলাফল করিল তাহারা মোরে সমবেদনা জানাইতে গৃহে আসিয়া উপস্থিত হইলো।তবে মোদ্দা কথা যাহা ছিল তাহা হইলো খারাপ ফলাফল, ইহারে মোর জীবনের বিপর্যয়ই বলবো "ফলাফল বিপর্যয়"