Sanowar Hossain


বাবা আছে বলেই আজও মায়ের চুরি-ফিতার স্বপ্ন বেঁচে আছে।

আমার বাবা, আমাদের চার সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের মাথা (আমাদের চন্দ্র, সূর্য, আলো, বাতাস, অক্সিজেন) যদিও আমার বাবা কোন নামি-দামী ব্যক্তিত্ব নয় (কখন কখনও বেকার)তবুও প্রায় সময় মনে হয় বাবাকে নিয়ে অনেক কিছুই লিখি। প্রথমদিকের কথা বলি- আমাদের বাড়িতেই একটা ছোট মুদি দোকান ছিল, যত সম্ভব সেই দোকানের চৌকাঠ ডাঙ্গানোর খুব কম চেষ্টাই করতাম (শুধু স্কুল বের হওয়ার সময় কিংবা খুব বাধ্য হলেই কেবল যেতাম)বাবাকে দেখলেই মনে হতো সমস্ত রাগ, ভয়, শাসন আর গাম্ভীর্য তাকে সর্বদা আড়াল করে রেখেছে কিন্তু এতকিছু হলেও একরাশ নিরাপত্তা আর এক আকাশ নির্ভরতার কেন্দ্রও হচ্ছে আমার বাবা। ছোটবেলায় যেদিন যেদিন বাবা আমাকে পড়াতে বসাতেন সেদিন সেদিন আমার কপালে মাইর অবধারিত থাকত এজন্যই হইত বাবার কাছে থেকে একটু দূরে দূরেই থাকার চেষ্টা করতাম। এরপর জীবনে কিছু টানাপোড়ানের সময় (অনেকটা ট্রাজেডির মতো) অতিক্রম করেছে আবার নতুন করে বাজারে মুদির দোকান দিয়ে তা থেকে উত্তরণও করেছে, এই সময়টা খুব দারুণ ছিল (বাবা সারাদিন দোকানের কাজে আর আমরা মেতে উঠতাম হৈ-হুল্লোড়ে) কিন্তু যখন সন্ধ্যা নামতো আবার এই মাটি আর টিনের বাড়িতে নেমে আসতো শুনশান নীরবতা। হা-হা, হি-হি বন্ধ, হাত-পা ধুয়ে বসে যেতে হতো পড়ার টেবিল নামক কুখ্যাত এক জায়গাতে)কিন্তু কি আশ্চর্য! একটু বড় হতে হতেই বাবার সেই রাগ সেই শাসন হুট করেই কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল। অবশ্যই বড় হয়ে আমিও বুঝতে পেরেছি জন্মের দিনই যে মানুষটা তার মাকে হারিয়েছে, যে মানুষটার বাবা নতুন নতুন সংসার নিয়ে মেতে উঠেছে তাকে তার ফুফুর কাছে ফেলে রেখে দিয়েছে, বাঁচার মতো কোন অবলম্বনও যে মানুষটা পায়নি সে মানুষটা একটু বদরাগি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। মাঝে মাঝে বাবাকে দেখে এতোটা অসহায় মনে হতো! মনে হতো জন্মই যেন এই মানুষটার আজন্মের পাপ হয়ে গেছে (এতকষ্টগুলা মেনে নিয়ে দিব্যি বেঁচে আছে) । সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে অনেক কিছুই পাল্টাতে শুরু করেছে, এই যেমন ধরেন ২০১১-১২ সালের দিকে খুব রাত করে বাসাতে ফিরতাম, সন্ধ্যার পর বন্ধুদের সাথে আড্ডাতে বসলে আড্ডা যেন ফুরাতেই চাইতোনা। রাত ২টা ৩টার দিকে আড্ডা শেষ হলে বাড়িতে ফিরতে ফিরতে চিন্তা করতাম আজকে বুঝি আমার খবর হয়ে যাবে। বাড়ির বাইরে থেকে বুঝার চেষ্টা করতাম বাবা জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে গেছে, এটা কিন্তু বাবার ভয়ে না কারণ আমি জানতাম বাবা ঘুমিয়ে গেলে মা আমাকে এক হাত নিবে এই ভেবে। পড়ালেখার ক্ষেত্রেও তাই- গণিত নিয়ে পড়ার ইচ্ছে যদিও আমার আগে থেকেই ছিল কিন্তু বাবার সাপোর্ট ছিল যে আমার কাছে যেটা ভাল সেটাই যেন করি। এখনতো আমার  বাবাই আমার পরম বন্ধু, সমস্ত স্বপ্ন আমাদের দুই ভাইকে নিয়েই দেখে (বলে আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন)এখন সন্ধ্যার পর বাসাতে বাবা এলে তবেই বাসাটা হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠে, বাবা না থাকলেই আগের সেই টিন আর মাটির বাড়িটা শুনশান হয়ে যায়। বাবা আছে বলেই মাথার উপরে ছাতা আছে, বাবা আছে বলেই আজও মায়ের চুড়ি-ফিতার বায়না বেঁচে আছে, বাবা আছে বলেই জান্নাত আছে।   

 

ভাল আছি বলতে অন্তত এখন আর দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগতে হয়না

একটা জিনিস খুব ভালভাবে খেয়াল করে দেখেছি- অপছন্দের জিনিসগুলার সাথেই একটু বেশী মুখোমুখি হওয়া লাগে, এই কথাটা কেন বলছি সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি। আমি বরাবরই নিজের সমালোচনা করতে একটু বেশীই পছন্দ করি, উপরক্ত টপিকটাও আমার একান্তই নিজের। আজকে কাজের ক্ষেত্রে খেয়াল করলে দেখবেন শতভাগ যুবকের মধ্যে ত্রিশভাগ যুবক তাদের বর্তমান কাজটার উপর কোন না কোনভাবে অখুশি, পঞ্চাশভাগ যুবক বেকার, দশভাগ যুবক বর্তমান কাজের উপর সন্তুষ্ট বাঁকি দশভাগ বড়োলোকের সন্তান, কাজ করলে বা না করলে কিছু যায় আসেনা। আমি প্রথম যুবকদের কাতারেই ছিলাম, যে কাজে নিয়োজিত ছিলাম সেটার সাথে কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলামনা, কেমন জানি ভেতরে একটা অস্থিরতা বিরাজ করতো, কখনো কখনো নীরবে চোখের পানিও ফেলেছি পরক্ষনে আবার আশেপাশের মানুষগুলার দিকে তাকিয়ে সান্তনাও নিয়েছি। এবার প্রথম প্রসঙ্গে আসি- প্রথম জীবনে আমি আর দশজন মানুষের মতোই প্রেম, সিগারেট, মিথ্যা কথা বলা, কোম্পানির জব ইত্যাদি অপছন্দই করতাম কিন্তু কাকতালীয়ভাবে সত্য যে এই সবকিছুর সাথেই আমার পরিচয় হয়েছে এবং খুব ভালোভাবেই হয়েছে। বর্তমানে আরেকটা নতুন পথে পা বাড়িয়েছি, যদিও প্রকৃত স্বপ্নটা এখনো পূরণ হয়নি তবুও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই আছি বলা চলে। আসলে যে মানুষগুলা সারাদিন ময়লা আবর্জনার সাথে থেকে অভ্যস্থ তাদের কাছে ঘামের দুর্গন্ধ পারফিউমের মতো, যে মানুষগুলা তিন সন্ধ্যা চা খেয়ে কাটিয়ে দিয়ে অভ্যস্থ হঠাৎ একদিন একটা রুটি একটা পূর্ণিমার চাঁদের মতোই মনে হবে, যে আমার মতো অতি কষ্টে জীবন অতিক্রম করছে তার কাছে এই সুখটুকা ঈদের আনন্দের মতো মনে হবে। অন্তত বাবা-মা কে ভাল আছি এই কথাটা বলতে গিয়ে দ্বিধা দ্বন্দে ভুগতে হয়না এই আর কম কি??

মানুষ হতে গিয়ে আর বড় হওয়া হয়না।


নিজেকে যখন প্রশ্ন করি কে আমি ???
ভেতর থেকে একটা উত্তর এমনিতেই চলে আসে আমি হলাম আমি। সর্বোপরি আমি একজন মানুষ তবে দেখেত খুব একটা ভাল না হলেও সুন্দর মানুষ দেখতে খুব ভালবাসি । কিছু কিছু মানুষের কাছে আমি ভালো মানুষ আর কিছু মানুষের কাছে আমি খারাপ। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নাই , কারণ সবার কাছেতো আর ভালো হওয়া যায়না- আমি আমার বাবার বেঁচে থাকার উৎস, মায়ের কলিজার টুকরা আর ভায়ের সম্মানের জায়গা, আর কি কিছু লাগে? তবে হ্যাঁ আমারও একটা মন আছে, আমারও কিছু পছন্দ, কিছু তৃপ্তি, কিছু ভালোলাগা, কিছু মন্দলাগা, কিছু প্রিয় মানুষ, কিছু স্বপ্ন, কিছু আনন্দ, কিছু সুখ, কিছু কষ্ট আছে যেটা সবারই থেকে থাকে। কিন্তু সব চাইতে বড় কথা হচ্ছে কাওরোর থেকে কিছু আশা করিনা, একবার বলেছিও আমার কোন দাবী নেই। আমি মনে করি প্রিয় মানুষগুলোর কাছে কিছু চেয়ে নিতে হয় না , তারা আপানেকে না চাইতেই দেবে সব চাইতে বেশী যেটা দিবে সেটা হচ্ছে কষ্ট। ও হ্যাঁ কষ্ট জিনিসটাকে আমি একটু বেশীই ভয় পাই কারণ এটা আমি জীবনে অনেক বেশি মাত্রায় পেয়েছি আর অনেক মানুষ কে দিয়েছিও। আমি বেশিরভাগ মানুষের মতো নেতিবাচক মনমানসিকতা নিয়ে থাকা পছন্দ করি না বরং কমসংখ্যক মানুষের মতো ইতিবাচক মনমানসিকতা নিয়েই থাকতে পছন্দ করি। কেউ যখন জিজ্ঞেস করে কেমন আছিস? উত্তর দিতে গিয়ে নিজেই বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই। আসলে আমি কেমন আছি? শেষে কিন্তু চকিত হয়ে ঠিকই বলেই বসি অনেক ভাল আছি, আসলে বলতেই হয় ভাল আছি না হলে আমার ভাল থাকার উপরে যাদের ভাল থকাটা নির্ভর করে তারা যে ভাল থাকতে পারবেনা। মানুষের জীবনী পড়তে খারাপ লাগেনা কিন্তু ইদানিং একাডেমীক বই পড়ায় আর উৎসাহ আসেনা। ভাবতে খুব ভালবাসি, আরও বেশী ভালবাসি সেগুলো অনেক আগ্রহ নিয়ে মানুষকে বলতে। মানুষ হিসেবে আমি খুবই সাধারণ কিন্তু নিজেকে অসাধারণ ভাবতে ভাল লাগে। ফালতু ভাব নেই না কারও সাথে, সবাইকে বন্ধু ভাবার চেষ্টা করি। বেশি কথা বলি না কিন্তু কারও ভাল বন্ধু হয়ে গেলে তার সাথে আর কথা থামেনা । মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনে শেষ ফেলি কিন্তু না, সবার কথা ভেবে আর করতে পারি না। সারাদিন গান শুনতে খুব ভাল লাগে কিন্তু গাইতে পারি না, আগে অনেক বেশি হাঁসতে ভাল লাগত এখন আর ভাল লাগে না, কিন্তু সবাইকে হাঁসাতে খুব ভাল পারি। সবার কাছে থেকে অনেক বেশি ভালবাসা পাই কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারি না। ফেসবুক আমার অনেক ভাল লাগে, নেট ছাড়া আমার জীবন ভাবতে একটু কষ্ট হয় । এখন আর আনন্দ করতে ভাল লাগে না, জীবনে অনেক আনন্দ করে ফেলছি  এখন ওই আনন্দ ভরা দিন গুলো নিয়ে থাকতে চাই । মানুষের হেল্প করতে ভাল লাগে কিন্তু সেটা করতে গিয়ে অনেক বিপদ ডেকে আনি, তবুও ভাল লাগে। তবে একটা ব্যাপার খুব চিন্তায় ফেলে দেয়- ছোট বেলা যখন কাওরোর কাছে দোয়া চাইতে যেতাম একটাই উত্তর দিতো "অনেক বড় হও"  আর ''মানুষের মতো মানুষ হও"। মানুষের মতো মানুষ হতে পারবো এই ভরসা আছে কিন্তু অনেক বড় হতে পারবো কিনা জানিনা কেননা এই সমাজে মানুষের মতো মানুষ হতে গেলে যে আর বড় হওয়া যায়না।