একাকী
রাতে টিনের চালে বৃষ্টি উপভোগ করার অনুভূতি ভাষাতে প্রকাশ করার মতো না।
আজকে বৃষ্টি নিয়ে একটা প্রকৃত গল্প বলি ১৯৯৯-২০০০ সালের দিকের ঘটনা আমাদের
বাড়ীর উপরে ছিল টিন আর চারপাশে দেয়াল। টিনগুলা আবার ছিল বিভিন্ন জায়গাতে
ফুটা, দাদার আমলের ঘর হলে যা হয় আরকি। আমাদের ঘরের পেছনদিকে আবার বিভিন্ন
গাছপালা ভর্তি ছিল আর এই গাছপালার ডালগুলা ছিল টিনের উপরে ফলে গাছের পাতা,
বৃষ্টির পানি পড়ে টিনে দ্রুত মরিচা পড়তো আর টিন ফুটা হয়ে যেত। বৃষ্টির দিনে তাই টিনের ফুটা
দিয়ে পানি ঘরের মধ্যে পড়তো। আমি দেখতাম, আম্মা আর আব্বা সারারাত না ঘুমিয়ে
টিনের ফুটা দিয়ে যেখানে যেখানে বৃষ্টির পানি পড়ছে সেখানে সেখানে প্লেট,
বোল, বাটি ইত্যাদি দিয়ে রাখছে। আবার যখন ঐ পাত্রগুলা পানি পড়ে ভর্তি হয়ে
যেত তখন পানি ফেলেদিয়ে আবার সেসব জায়গাতে রাখতে হতো ফলে বৃষ্টির রাতগুলাতে
বাবা, মাকে
ঘুমাতে দেখতামনা। হয়তো এমনও হয়েছে আমরা দুইভাই ঘুমিয়েই আছি আমাদের উপরে
যাতে বৃষ্টির পানি না পড়ে তার জন্য একটা বোল আমাদের উপরেই ধরে
রেখেছিলেন(ধারণা)। আমাদের ঘরগুলাও অতোটা শক্ত, মজবুত ছিলনা ফলে কালবৈশাখীর
আগে আব্বাকে দেখতাম ঘরের চারপাশে খুঁটি দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখতে। এখনও বাড়ীটা
পাকা হয়নি কিন্তু টিনগুলা আজ আর নেই ভালো টিন লাগানো হয়েছে অনেক আগেই
বৃষ্টির পানি হলে বাবা, মাকে আর রাত জেগে থাকতে হয়না তারপরও ছোটবেলার সেই
ভয় এখনও যায়নি। ছোটবেলা যেমন বৃষ্টি আসার আগে মনে মনে প্রার্থনা করতাম যেন
বৃষ্টি না আসে এখনও তেমন প্রার্থনাই করি। পড়ালেখার জন্য প্রায় ৭ বছর থেকে
বাইরে থাকি, যখন রেল ষ্টেশনের দিকে ঘুরতে যায় তখন বস্তি গুলার দিকে তাকালেই
সেই দিনগুলার কথা মনে পড়ে যায়। মনে মনে শুকরিয়া আদায় করে বলি আমার সেই
ছোটবেলার দিনগুলি এদের থেকে সুখের ছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন