ভালবাসায় গড়া শহীদ মিনার:
২০০৫ সাল আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র, তখন আলিনগরে এতো বড় শহীদ মিনার ছিলনা ফুল দেয়ার মতো এতো বড় বেদিও ছিলনা। আমাদের প্রাণের দাবি ছিল একটা শহীদ মিনার আর স্কুলের বাউন্ডারী ওয়াল, প্রতিবছর আশ্বাস পেতাম কিন্তু বাস্তব দূরে ছিল । আমরা উদ্যেগ নিয়েছিলাম অস্থায়ী শহীদ মিনার বানানোর, তল্লা বাঁশ ছিল মূল ভরসার নাম, বিকেল থেকে কাজে নেমে পড়লাম। অনেকের বাঁশ ঝাড় থেকে বাঁশ চেয়ে নিয়ে মাপ মতো কাটার কাজ শুরু করতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল আসলে বাঁশ চাওয়ার কাজটা ছিল খুব বাজে, তখন পকেটে টাকাওৎছিলনা যে আমরা নিজে থেকেই বাঁশ কিনে শহীদ মিনার বানাবো। যে চাঁদা তুলেছিলাম তা দিয়ে রাতের খাবার আর রঙীন পেপার কেনার খরচটাই জুটেছিল। Samayun Haque Rocky ছিল সার্বিক দ্বায়িত্বে সব চাইতে বেশি শ্রমটাও ঐ দিয়েছিল Abu Kalam হিটলার, রাজু, নাসিরুল ছিল দুরন্ত টাইপের, দুরন্ত টাইপের পুরষ্কারও জিতেছে অনেক আর DM Alvi , আমি, Md Nazmul Haque, Md Mottakin Abdul Kadiir Wahid Abdullah আমরা লাজুক প্রকৃতির ছিলাম উদ্যগ নিতামনা কিন্তু কেও উদ্যগ নিলে তা পূর্ন করার কাজে থাকতাম। অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছিল ক্ষিদেও লেগেছিল খুব, মুড়ি আর লাড়ু নিয়ে রা হৈচৈ হয়েছিল তা মনে রাখার আর যে বিশ্রী ভাষার ব্যবহার হয়েছিল সেটাই ভাষার স্বাধীনতা। শহীদ মিনারের কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় সকাল ঘনিয়ে এসেছিল ফুল দিয়ে পুরন হবেনা ভেবে অনেকগুলা শিমুল ফুল আর কিনু চাচার বাড়ীর গাছ থেকে চুরি করা কাগজ ফুল দিয়ে ঐ রাতেই অর্ধেক ভর্তি করে ফেলেছিলাম। সকাল হয়ে আসতে দেখে সবাই বাসার দিকে গেলাম কেও কেও বাসায় গিয়ে ঘুমিয়েও পড়েছিলাম আমিও তাদের একজন । ঘুম ভাঙতেই ধড়ফড় করে উঠে স্কুলে গিয়ে দেখি প্রভাতফেরী শেষ হয়েছে বক্তব্য চলছে শহীদ মিনারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অনেক ফুল পড়েছে আমাদের সবার চোখে ঘুমের ভাব থাকলেও আনন্দের পুলক ও ছিল বাহবাও পেয়েছিলাম। শিক্ষকেরা পুনরায় আশ্বাস দিলো শহীদ মিনার হবে, শহীদ মিনার হয়েছে , দেরীতে হলেও হয়েছে সেদিনের বাঁশ দিয়ে গড়া শহীদ মিনার আজ ইট পাথরের হয়েছে। নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজের শহীদ মিনার হবার আগে আমাদেরটাই বড় ছিল যা বড় বেদী! ফুল দিয়ে ভরা প্রায় অসম্ভব, তাতে কি? শুন্যস্থানটুকু ভালবাসা দিয়ে ভরে দেয়ার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে এই ভালবাসা রফিক, সফিক, সালাম, বরকতদের জন্য। এই শহীদ মিনারটা ছিল ভালবাসায় গড়া শহীদ মিনার এবং আমার দেখা অন্যতম সুন্দর এক শহীদ মিনার।