Sanowar Hossain


সেদিনটা যেন না আসে


২৪ আগস্ট ২০২০ সালের ঘটনা

বরাবরের মতো সাপ্তাহিক চাকরীর খবরে আজও একটা খবর চোখে পড়লো, বলে রাখা ভালো সরকারী চাকরীর পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে বেকার হয়ে পড়েছি তারপরের ঘটনা- বাবা সরকারী চাকরীর বয়স তো আগামী কালকেই শেষ হয়ে যাবে শেষবারের মতো এইটাতে ট্রাই করে দেখবো কি (বাবার কাছে পরামর্শ নেবার কারন এখন আমি বেকার বাবার কাছে হাত খরচ নিয়েই চলতে হয়)
বাবাঃ কতো টাকা লাগবে
আমিঃ ১০০ টাকা ট্রেজারি ফর্মের দাম ১০ টাকা, খামের দাম ৪ টাকা আর কুরিয়ার খরচ ১৮  টাকা। সব মিলিয়ে দেড়শ টাকা দিলেই হবে (বিড়ির খরচটাও ধরে নিলাম)
বাবাঃ পরীক্ষা কোথায় হবে?
আমিঃ ঢাকাতে, ও সমস্যা না বাবা চাউলের ট্রাক নিয়ে যারা ঢাকা যায় তাদের সাথে একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে ওদের সাথেই চলে যাবো।
বাবাঃ করে দেখতে পারো তবে হাত খরচ খুব একটা বেশী দিতে পারবোনা এইদিকে বাধনকে সেট করতে অনেক খরচ হয়ে গেছে ।
আমিঃ বাবা ও সমস্যা নয় ম্যানেজ হয়ে যাবে।
বাবাঃ হুম, ম্যানেজ তো আমাকেই করতে হবে
আমিঃ তা ঠিক।

পরীক্ষার দিনের ঘটনাঃ পরীক্ষা দেয়া শেষে সেদিন সন্ধ্যাতে রেজাল্ট হোলও অন্যান্য পরীক্ষার মতো এটার রিটেনেও টিকলাম বাসাতে ফোন দিলাম বাবা রিটেনে টিকেছি কালকে ভাইভা, ওপার থেকে আওয়াজ এলো তাতো বারবারই টিকো দেখো এবার কি হয় একটু সাহস নিয়ে বললাম এবার ইনশা আল্লাহ হবে (যদিও এর আগে অনেকবার একথা বলেছি) পরবর্তী দিন ভাইভা দিলাম ভাইভাও ভালোই দিলাম দুপুরে পকেটের দিকে তাকালাম মাত্র দুইটাকা অবশিষ্ট আছে ভাবলাম না খেয়ে থেকে অভ্যাস হয়ে গেছে আরেকটা দিন না খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারবো। সন্ধ্যার সময় ফাইনাল রেজাল্ট হোলও লিস্টে দেখলাম ১০ নাম্বারে নাম নিবে ৯ জন। বাবাকে ফোন দিবো কিনা ভাবছি তবুও দিলাম বললাম বাবা এইবারও হলোনা বাবা বলল বাড়িতে ফিরে আসো বিয়ে করো সংসারে মনোযোগ দাও যেটুকুন জমি আছে চাষ করলে কোনওভাবে সংসারটা চলে যাবে। একবার ভাবলাম বাড়ি আর ফিরে যাচ্ছিনা আবার ভাবলাম না যায় ট্রাক ড্রাইভারকে ফোন দিলাম ড্রাইভার বলল কালকে হরতাল গাড়ি রাতে ছাড়বেনা আবার পকেটের দিকে তাকালাম দুইটাকাই অবশিষ্ট রয়েছে। হেঁটে বাড়িতে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম টাকা দুইটা দিয়ে একটা ডার্বি সিগারেট জ্বালিয়ে নিয়ে হাঁটছি, হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল রহনপুর ৩৭৪ কি.মি। একবার পথের দিকে তাকায় আর একবার বিড়ির দিকে..বিড়ি শেষ হয়ে আসে তবুও পথ আর শেষ হয়না। চলতে চলতে গানের কলি মুখে এসে পড়ে- পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তবু মাগো বলো কবে শীতল হবো, কতোদূর আর কতোদূর বলো মা।

যদিও এমন ঘটনা কাম্য নয় তবুও কেন জানি মনে হয়ে গেল


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন