Sanowar Hossain


চোখের সামনে সব বোনগুলাকে ভাই হয়ে যেতে দেখলাম।


বহুদিন আগে আমার একটা ভাই-বোনে পরিপূর্ণ দিন ছিলো। সত্যি বলতে কি নিজের কোন বোন না থাকার কারণেই হয়তো আত্মীয় নামের  ভাই-বোনগুলাকেই নিজের মতো মনে হতো। আনন্দের কমতি ছিলনা, হৈ হুল্লোড় ছিল নৈমত্তিক ব্যাপার। সময় বদলে গেছে কেও কেও ম্যাড়মেড়ে কর্দমাক্ত গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমিয়েছে, জীবনের তাগিদে আজকে আমাকেও সেই পথই বেছে নিতে হয়েছে। কিন্তু এখানে আসা প্রায় বছরখানেক হলেও আমি সেই আগের মতোই আছি, অনেক বন্ধু মুখ টিপে হাঁসাহাঁসি করে বলে তুই ঢাকাতে থাকিস!! আমি বুঝতে পারি তারা কি বোঝাতে চাইছে কিন্তু সেটা আমার কাছে তেমন কিছুই মনে হয়না কারণ শহরে আসার ফলে আমার বাবা মা যেন আমার আসল ফ্লেভারটা ভুলে না যায়। চুলের কাট বলেন, পোশাক বলেন কিংবা মুখের ভাষা বলেন এতটুকুও পাল্টেনি, পাল্টাতে পারিনি। আসলে আমার বাবা মায়ের কাছে যেন অন্তত আমাকে আমার প্রফেশনের কোন সমস্যা নাহয় সেই চেষ্টাই করি। আমার বাবা মাকে গেঁয়ো বলবেন? সাথে আমাকেও বলিয়েন গর্ববোধ করবো। এইবার আসি শহরের কথাতে- খারাপ করে বলতে গেলে এখানে গ্রাম থেকে আসা বা শহরের স্থানীয় সবাই ব্রা পরে, সেমিজ খুব কম পরে। আমার এই কথাটাতে আমার উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে আমাকে লুইচ্চা বলতে দ্বিধা নাও করতে পারেন, কিন্তু আমি চোখের সামনে যেটা দেখছি সেটা তো আর ভুল দেখছিনা। কেন আমাকে মা- বোন সমতূল্য মানুষগুলার দিকে একবার দেখে লজ্জায় মাথানত করতে হবে বলতে পারবেন? কেন ঢাকা শহরের মেয়েদের মুখের দিকে দেখে মা-বোনের মুখ একবারও ভেসে উঠেনা? কেন তাদের চালচলন দেখে খদ্দের আর পতিতার মুখ ভেসে আসে বলতে পারবেন? হয়তো বলতে পারবেন, অকপটে বলে ফেলতে পারবেন "সোসাইটি"। আপনার এই সোসাইটির গুষ্টিমারী আমি, যে সোসাইটিতে নারীদের দেখে মায়ের মুখটা মনে করে চোখের কোনে একফোঁটা অশ্রুকণা জমা হয়না। নেহাত পেটের দ্বায়ে তাই পড়ে আছি, আমার কাছে আমার কর্দমাক্ত গ্রামটাই বেশী প্রিয়। এখনকার দিনে ভাইয়ারা সব ঘরমুখো হয়ে গেছে তাই চুল কেটে, টি শার্ট আর জিপসি পরে আপুরা সব তাদের জায়গা পূরণ করছে, চোখের সামনে বোনগুলা সব ভাইয়া হয়ে যাচ্ছে, গ্রামের তাসলিমা হয়ে যাচ্ছে তাসলিমা নাসরিন, নিজে খুলছে অপরকে খুলতে উদ্বুদ্ধ করছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন