Sanowar Hossain


আজকে শহরের বৃষ্টিটা দারুণ ছিল

আজকে সন্ধ্যাটা অপরিণত শিশুর মতোই হয়েছে, অপরিণত শিশু যেমন জন্মের কয়েকদিন আগেই জন্মে যায় তেমনি সন্ধ্যাটা কয়েক মিনিট আগেই নেমেছে। অবশ্যই এর পেছনে শ্রাবনের কালো মেঘের হাত রয়েছে। রাত আটটা বাজার পর থেকেই একবার ঘড়ির দিকে আর একবার শোরুমের গ্লাসের ফাঁক গলিয়ে বাইরের দিকে ঘনঘন দেখে চলেছি উদ্দেশ্য কখন বৃষ্টি থামে। আসলে এই টাইপের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আজকের আগে আমাকে কোনওদিন আটকিয়ে রাখতে পারেনি, আজকেই জ্বর থেকে ওঠার পর ঝুঁকি নিতে চাইনি। এমনিতেই জ্বরে শরীরটাকে ঝাঁকিয়ে দিয়ে গেছে যেমনটা বন্যার পানি নামার পর সবকিছু কর্দমাক্ত করে দিয়ে যায় ঠিক তেমন। শেষবার ঘড়ির দিকে দেখলাম রাত প্রায় নয়টা, আর অপেক্ষা করতে পারলামনা ইয়োলোর একটা শক্ত কালো ব্যাগ মাথায় দিয়ে সৈনিক ক্লাবের দিকে হাঁটা দিলাম। রোডে নেমেই ফাঁকা অবস্থা দেখে গা টা কেমন ছমছম করে উঠল, যদিও গুলশান হামলার পর থেকে এই অবস্থা দেখে অভ‍্যস্থ তারপরেও এতো তাড়াতাড়ি এই অবস্থা কল্পনা করিনি অথচ এই রোডটাই বুঝি ঢাকা শহরের সবচাইতে সিকিউরড রোড। যাইহোক ব্যাগটা মাথায় করে টিপটিপ বৃষ্টি উপেক্ষা করে হেঁটে চলেছি, পায়ের আওয়াজ শুনে রাস্তার ধারে একটা বাড়ির কুত্তা ঘেও ঘেও করে উঠলো পরক্ষনে প্রভুর আওয়াজ পেয়ে ক্ষ্যান্ত হলো। মোড়ের সামনেই পুলিশ চেকপোস্ট, খেয়াল করিনি আমার লাঞ্চবক্সটা বৃষ্টিতে ভিজে কালো ব্যাগের অভাতে রোডলাইটের আলোতে  ওয়ারলেসের মতো দেখাচ্ছে আর এই ভেবে কর্তব্যরত এক পুলিশ স্যালুট দিয়ে বসল। পরক্ষনে পুলিশটার দিকে খেয়াল করে দেখলাম ভুল জায়গায় সম্মান দেখিয়ে বেচারা প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি লজ্জা পেয়েছে। মোড়ে এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু অন্যদিনের মতো বাসের জন্য অপেক্ষাকারী কাওকে চোখে পড়লোনা, এদিকে ততক্ষনে বৃষ্টির মাত্রাটা একটু ঘন হতে শুরু করল ভাবলাম এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে আবার জ্বরে হামলা করবে তাই ওভারব্রিজের নিচে মাথা গোঁজাবার একটু জায়গা খুঁজে নিলাম। একটু পরে এক টিন এজার মেয়ে ও বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে আমার পথ অবলম্বন করল। অল্প আলোতে মেয়েটার দিকে খেয়াল করলাম একটা বিদ্যুৎ আলোকছটা আরেকটু বেশী করে দেখার সুযোগ করে দিয়ে গেল, দেখে যেটা বুঝলাম সেটা হচ্ছে মেয়েটা গাঢ় মেকআপ করে ছিল বৃষ্টির পরে জায়গা জায়গা মেকআপ ধসে পড়েছে। কর্দমাক্ত রোডের কাদা ধুয়ে গেলে যেমন রোডের আসল কালার বের হয়ে আসে মেয়েটার এখনকার লুকটা ঠিক তেমনটা দেখাচ্ছে, তবে দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী এতে কোন সন্দেহ নাই। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে এরা যতটা না বাসাতে তার স্বামীর জন্য মেকআপ করে তার চাইতে বেশী মেকআপ করে শোরুমের সেলসম্যানদের জন্য। মেয়েটা শরীর থেকে পানি ঝাড়তে ঝাড়তে জিজ্ঞেস করলো একটা টিস্যু হবে? আমি অনেকটা অপ্রস্তুতভাবে বলে ফেললাম সরি আজকে শোরুমে টিস্যু ছিলোনা, হয়তো মেয়েটা বলেই ফেলতো শোরুমের টিস্যুর উপর নির্ভর করে চলেন? কিন্তু তার আগেই বলাকা সার্ভিস চলে এলো মেয়েটাও আমার পেছন পেছন বাসে উঠলো। মহাখালীতে নেমে আমার পেছন পেছন দৌড় দিয়ে একই লেগুনাতে উঠে পড়ল। মাঝে মাঝে কিছু যাত্রা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মিলে যায় সেটা আকাশ থেকে বৃষ্টির পৃথিবী যাত্রাই হোক কিংবা আমার বনানী থেকে শ্যামলী যাত্রাই হোক। লেগুনার মধ্যে মোটে চারজন যাত্রী বৃষ্টি আরও ঘনিয়ে আসছে মেয়েটা লেগুনার ফাঁক গলিয়ে বৃষ্টি উপভোগের চেষ্টা করছে , মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছটা মেয়েটার গায়ে লাগার সাথে সাথে আমার দিকে সরে আসছে আর আমার মোবাইলের কীবোর্ড নিঃশব্দে টাইপ করে চলেছে। একটু পরেই শ্যামলী নেমে যেতে হবে হাজার বৃষ্টি থাকলেও, মেয়েটাও হয়তো দুই নাম্বার গলির দিকেই যাবে....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন